• জট কাটল, তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ রেখেই বিহার ভোটে ‘ইন্ডিয়া’
    বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: অবশেষে জোটের জট কাটল। ইগো, আসন সমঝোতায় মতান্তর এবং মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা নিয়ে চাপানউতোরের জেরে মহাজোট ইন্ডিয়ার অন্দরে দ্বন্দ্ব প্রকট এবং প্রকাশ্য হয়েছে। প্রার্থী তালিকা ঘোষণায় পর্যন্ত দেখা গিয়েছে সেই মতবিরোধের ছায়া। তা নিয়ে এনডিএর পক্ষ থেকে লাগাতার আক্রমণ চলছিল। এমনকি বৃহস্পতিবারও দলীয় কর্মীদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘নিজেদের মধ্যে লড়াই কীভাবে করা যায়, সেটা বিরোধীদের থেকেই শেখার।’ তবে বেশিক্ষণের অপেক্ষা নয়। অবশেষে ঘোষণা হল। এদিনই। মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র পক্ষ থেকে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করা হল, তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে রেখেই হবে বিহারের ভোটযুদ্ধ। এমনকি অনগ্রসর মুখ বিকাশশীল ইনসান পার্টির সুপ্রিমো মুকেশ সাহানির নাম এখনই ঘোষণা হয়েছে উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে। কংগ্রেসের অশোক গেহলট, আরজেডির তেজস্বী যাদব, সিপিআই এমএলের দীপঙ্কর ভট্টাচার্যরা একমঞ্চে এদিন জানিয়ে দিয়েছেন, আর কোনও দূরত্ব অথবা দ্বন্দ্ব নেই। বিহারে একজোট হয়ে লড়াই করতে ময়দানে নামছেন তাঁরা। বস্তুত শুধুই আসন সমঝোতার মতান্তর নয়। 

    অন্যতম যে ইস্যুতে ‘ইন্ডিয়া’র একমত হওয়া নিয়ে তীব্র টানাপোড়েন চলছিল, সেটি হল—মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর প্রকাশ্য ঘোষণা। জানা যাচ্ছে, তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে রাহুল গান্ধীর দ্বিধা ছিল। কারণ, সেক্ষেত্রে নন যাদব ওবিসি তথা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। তাই কোনও মুখ সামনে না রেখে লড়াইয়ের পক্ষে ছিলেন তিনি। কিন্তু লালুপ্রসাদ যাদব অসুস্থ শরীরেও হস্তক্ষেপ করেন। তিনি বার্তা দেন যে, যেহেতু ভোটের আগে বিজেপি জোট নীতীশ কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করছে না, সেটাই ইস্যু করে ময়দানে নামতে হবে। আর সেজন্য দরকার ইন্ডিয়া জোটের একটি সুস্পষ্ট মুখ। এরপরই বরফ গলে। বৃহস্পতিবার তেজস্বী যাদবের নাম ঘোষণার সঙ্গেই ‘ইন্ডিয়া’র পক্ষ থেকে গেরুয়া শিবিরে পালটা চাপ দেওয়া হল—আমরা তো আমাদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিলাম। এবার এনডিএকে চ্যালেঞ্জ করছি, তাদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম জানাক। সেটা না করলে বিহারবাসী বুঝে যাবে, বিজেপি এবার জিতলেও নীতীশ কুমারকে আর মুখ্যমন্ত্রী করা হবে না। সেই ইঙ্গিত অমিত শাহও দিয়েছেন। মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র বক্তব্য, বিহারে বিজেপি মহারাষ্ট্র মডেল নিতে চলেছে। অর্থাৎ ঠিক যেভাবে ভোটের ফলপ্রকাশের পর একনাথ সিন্ধেকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তেমনভাবে বিহারে জিতলেও বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বসবেন। নীতীশ হবেন বিহারের একনাথ সিন্ধে। তেজস্বী যাদব বলেন, ‘আমরা তো প্রথম থেকেই বলছি যে, নীতীশ কুমার আর মুখ্যমন্ত্রী হবেন না।’ বস্তুত বৃহস্পতিবার স্পষ্ট হয়েছে যে, এই ইস্যুতে ভোটের ময়দানে বিজেপি জোটকে আক্রমণ করা হবে, যাতে বিহারজুড়ে বারংবার প্রচারে প্রশ্ন তোলা যায়—এনডিএর মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? নীতীশ কুমারের দলের পক্ষে এই প্রচার অবশ্যই বড়সড় লোকসানের হতে পারে! কারণ প্রশান্ত কিশোরও বলে চলেছেন যে, নীতীশ কুমারকে বিজেপি আর মুখ্যমন্ত্রী করবে না। এতদিন ধরে ইন্ডিয়ার দ্বন্দ্ব নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। এবার এনডিএতে ফাটল ধরানোর চেষ্টা—মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? 
  • Link to this news (বর্তমান)