• শঙ্খ, উলুধ্বনিতে ভাইয়ের মঙ্গলকামনা গৌড়বঙ্গজুড়ে পালিত ভাইফোঁটা
    বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: সকাল থেকেই বাড়িতে বাড়িতে উলু, শঙ্খধ্বনি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পালিত হল মালদহ এবং দুই দিনাজপুরে। মিষ্টির দোকানগুলিতে ছিল দীর্ঘ লাইন, বোনেদেরও ব্যস্ততার সীমা ছিল না। আসন পেতে ভাইয়ের কপালে রক্তচন্দন, শ্বেতচন্দন, শিশির, দই সহ বিভিন্ন দ্রব্য মিশ্রিত ফোঁটা দিয়ে ভাইদের দীর্ঘায়ু কামনা করলেন বোনেরা। সঙ্গে ভাইদের মুখে মিষ্টিও তুলে দিলেন তাঁরা। অন্যদিকে, দিদি ও বোনেদের বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দিলেন দাদা ও ভাইরা। 

    বিয়ের পর প্রথম ভাইফোঁটা ইংলিশবাজারের ২৮ বছরের মৌসুমীর। ভাই সুনন্দ সদ্য চাকরি পেয়েছেন বেঙ্গালুরুর একটি সংস্থায়। দিদির হাতে ফোঁটা নিতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দু’দিনের ছুটি নিয়ে এসেছেন মালদহে। প্রথম উপার্জনের অর্থে দিদিকে উপহার দিয়েছেন দামী স্মার্টফোন। অন্যদিকে, ভাইকে একটি নামকরা সংস্থার সানগ্লাস দিয়েছেন দিদি। 

    তবে, বয়স ভেদে পার্থক্য দেখা গিয়েছে উপহারের ধরনেও। ৪৫ বছরের স্কুল শিক্ষক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য তাঁর বোনকে দিয়েছেন বঙ্গ সংস্কৃতির অঙ্গ শাড়ি। অন্যদিকে, কবিতাপ্রেমী দাদাকে বোন সুতপা উপহার দিয়েছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার বইয়ের সঙ্গে দামি পেন।

    এদিন অনেক ভাই, বোন সপরিবার মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন মালদহ শহরের বিভিন্ন রেস্তরাঁয়। প্রজন্ম অনুযায়ী তাঁদের খাবারের অর্ডারেও স্পষ্ট ছিল পার্থক্য। জেন-জি ভাইবোনদের পছন্দের তালিকায় যখন চাইনিজ বা বিরিয়ানি, চল্লিশোর্ধ্বরা বেছে নিয়েছেন শুক্তো, লাউচিংড়ির মতো সাবেকি বাঙালি পদ।

    তবে, একটি ক্ষেত্রে সব প্রজন্মের ভাইবোনেরা ছিলেন একই মেজাজে। চুটিয়ে পারিবারিক আড্ডায় মেতেছেন সকলে। ভাইফোঁটার দিন মোবাইল এবং ব্যস্ততা সরিয়ে রেখে সময় কাটিয়েছেন ঘরোয়া মেজাজেই। এদিন ভিডিও কলের মাধ্যমে ফোঁটা দিয়েছেন চাঁচলের শিক্ষিকা রম্যাণি চট্ট্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন পর বিশেষ কারণে এবার জলপাইগুড়িতে ভাইয়ের বাড়ি যেতে পারেননি তিনি। তাই যমজ ভাই জয়দীপকে ডিজিটাল মাধ্যমে ফোঁটা দেন রম্যাণি।

    বৃহস্পতিবার বালুরঘাট শহরের অধিকাংশ দোকানে কেনাকাটা করতে সকাল থেকেই চরম ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গিয়েছে।  মিষ্টির দোকানের পাশাপাশি শপিং মল সহ উপহার সামগ্রী, জামাকাপড়, মাংস ও মাছের দোকান, সবজির বাজারেও ছিল সমান ব্যস্ততা।

    উপহার সামগ্রী বিক্রেতারা জানিয়েছেন, টাচ ল্যাম্প, রোজ ল্যাম্প, ম্যাজিক মিরর, ক্রিস্টাল ও ফাইভ-ডি ফটো ফ্রেমের চাহিদা বেশি ছিল। ক্রেতাদের অধিকাংশই চীনের তুলনায় ভারতে তৈরি উপহার সামগ্রী বেশি কিনেছেন।  

    রায়গঞ্জে মূক ও বধিরদের হোম সূর্যোদয়ের বাচ্চাদের নিয়ে ভাইফোঁটার আয়োজন করেছিলেন শহর লাগোয়া উদয়পুর স্পোর্টিং ক্লাবের কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার যখন ঘরে ঘরে অনুষ্ঠান, খাওয়াদাওয়া, উপহার আদানপ্রদানে সকলে ব্যস্ত, সূর্যোদয় হোমে এই অনুষ্ঠান অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জীবনে। ক্লাবের কর্মকর্তা আশিষ কর বলেন, আমাদের ক্লাবে দীপালি উৎসব হয়। তার অংশ হিসেবে হোমের বাচ্চাদের নিয়ে ভাইফোঁটার আয়োজন। ২৫ জন শিশু অংশ নিয়েছিল। স্থানীয় মহিলারা তাঁদের ফোঁটা দেন। হোমের প্রিন্সিপাল পার্থসারথি দাস বলেন, বাইরের জগতের সঙ্গে আমাদের হোমের আবাসিকদের সেভাবে যোগাযোগ থাকে না। ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানে ওদের অংশগ্রহণ আমাদের বড় প্রাপ্তি।  জওয়ানদের ফোঁটা। গোপীনগর সীমান্তে। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)