কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে আলুবীজের দাম বৃদ্ধি পাঞ্জাবের ফার্ম মালিকদের, অভিযোগ মুর্শিদাবাদের বীজ ব্যবসায়ীদের
বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, বহরমপুর: পাঞ্জাবে ফার্ম মালিকরা একজোট হয়ে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে বীজের দাম বাড়িয়েছেন। বেশি দামে পাঞ্জাবের বীজ কিনে চাষের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না মুর্শিদাবাদ জেলার আলুচাষিরা। দামের কারণে পাঞ্জাবের আলুবীজ ব্যবহারে তাঁদের আগ্রহ কমছে। চাষের খরচ কমাতে বহু চাষি হিমঘরে রাখা আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করছেন। শুধু তাই নয়, অনেক চাষি আলুর বদলে সরষে চাষে ঝুঁকছেন। এই পরিস্থিতিতে জেলার আলুবীজ ব্যবসায়ীরা বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন।
ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানান, কৃষকদের আলু চাষে আগ্রহ কমছে। এই প্রবণতা বজায় থাকলে এবার আলু উৎপাদনে ধাক্কা খাবে। রাজ্যে প্রয়োজনীয় আলুর জোগানে তার প্রভাব পড়বে। চাষিদের দাবি, হিমঘরে মজুত আলু ভালো দামে বিকোচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে বেশি দামে বীজ কেনা মূর্খামি হবে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় গতবছর ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। অস্বাভাবিক হারে ফলনও হয়। বহু চাষি ঝুঁকি নিয়ে হিমঘরে আলু রেখে দাম না পাওয়ায় জোর ধাক্কা খেয়েছেন। এবার তাঁরা বিকল্প হিসেবে সরষে চাষ করছেন। বাজারে সরষের বীজ ব্যাপক বিকোচ্ছে। যে চাষিরা আলুচাষ করছেন, তাঁদের বেশিরভাগই ঘরের আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করছেন। বুধবার মুর্শিদাবাদের বাজারে পাঞ্জাবের আলু বীজ ১৬০০টাকা প্যাকেট(৫০ কেজি) দরে বিক্রি হয়েছে। আলু চাষি পরিমল মণ্ডল বলেন, গতবছর আলু হিমঘরে রেখে এখনও বিক্রি করতে পারিনি। এরপর বেশি দামে পাঞ্জাবের বীজ না কিনে হিমঘরে রাখা আলুই বীজ হিসেবে ব্যবহার করছি। ফলন কম হলেও আট-ন’হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। অপর চাষি তুষার ঘোষ বলেন, এবার আলু চাষ কমিয়ে দু’বিঘা জমিতে সরষে চাষ করেছি। সরষে চাষে খরচ অনেক কম। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে লাভও ভালো হবে বলে আশা করছি।বীজ ব্যবসায়ী হীরা মির্জা বলেন, পাঞ্জাবের ফার্ম মালিকরাই এর জন্য দায়ী। চার গাড়ি বীজ চাইলে দু’গাড়ি দেওয়া হচ্ছে। কৃত্রিমভাবে বীজের অভাব তৈরি করে দাম বাড়ানোই পাঞ্জাবের ফার্ম মালিকদের লক্ষ্য। রাজ্য সরকারের অবিলম্বে বিষয়টি নিয়ে ওই রাজ্যের সরকারের সঙ্গে কথা বলা উচিত।
হিমঘরব মালিকরা জানান, মুর্শিদাবাদ জেলায় এখনও হিমঘরে ৩৮-৪০ শতাংশ আলু মজুত রয়েছে। দুর্গাপুজোর আগে ১৮০টাকা প্যাকেট দরে আলুর বন্ড বিক্রি হয়েছে। বুধবার আলুর বন্ডের দাম ২০০টাকা হলেও কেনার লোক খুবই কম। সেভাবে হিমঘর থেকে আলু বের হচ্ছে না। হিমঘর মালিক সুনীল ঘোষ বলেন, নভেম্বর মাস থেকেই বাজারে প্রচুর সব্জি আমদানি হবে। ডিসেম্বরে সস্তার সব্জিতে বাজার ছেয়ে যাবে। ফলে সেসময় হেঁশেলে আলুর ব্যবহার কমে যাবে। আলু ব্যবসায়ীরা জানালেন, হিমঘরে মজুত সিংহভাগ আলু চাষিদেরই। আলু হয়তো সব বেরিয়ে যাবে। কিন্তু দাম কোথায় দাঁড়াবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।