মাকনা হাতির আক্রমণে মৃত্যু মা, শিশুকন্যা সহ তিনজনের, মাদারিহাটে ‘ত্রাস’কে বাগে আনতে তল্লাশি বনদপ্তরের
বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: জলদাপাড়ার দলছুট একটি মাকনা হাতির হামলায় মৃত্যু হল মা ও তাঁর দেড় বছরের শিশু কন্যার। বুধবার রাত ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে মাদারিহাট ব্লকের মধ্য খয়েরবাড়ির খেরিয়াপাড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতরা হল সোনাই মুণ্ডা (৩৫) ও তাঁর দেড় বছরের মেয়ে লক্ষ্মীর। বনদপ্তর হাতিটির খোঁজে জলদাপাড়ার জঙ্গলে চিরুণী তল্লাশি চালাচ্ছে। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
জলদাপাড়ার দলছুট ওই মাকনা হাতি ক্রমশ ‘ত্রাস’ হয়ে উঠেছে। ছেঁকামারিতে মাকনাটির হামলায় বুধবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয়েছে ভুটভুটি চালক কাদের আলির (৪৩)। ছ’ঘণ্টার ব্যবধানে রাত ১২টা নাগাদ ওই মহিলা ও তাঁর শিশুকে পিষে মারে হাতি। ঘটনায় ব্লকজুড়ে রীতিমতো ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বনদপ্তরের প্রাথমিক অনুমান, ‘ত্রাস’ হয়ে ওঠা ওই মাকনা হাতির আক্রমণেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
বনদপ্তর ও স্থানীয় সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, কালীপুজো দেখে রাত ১২টার নাগাদ খেরিয়াপাড়ার সীতারাম মুন্ডা তাঁর স্ত্রী সোনাই ও শিশুকন্যা লক্ষ্মীকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। স্ত্রী মেয়েকে কোলে নিয়ে সামনে হাঁটছিলেন। কিছুটা পিছনে ছিলেন সীতারাম। সেই সময় মাকনাটি অন্ধকারে মা ও শিশুটিকে পিষে দিয়ে চলে যায়। সীতারাম বলেন, বেশকিছুটা পিছনে থাকায় আমি বেঁচে যাই। চোখের সামনে স্ত্রী ও মেয়েকে মেরে ফেলতে দেখেও কিছুই করতে পারলাম না। তার চেয়ে যদি আমাকে মেরে ফেলতো হাতিটি তাহলে ভালো হতো।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলদাপাড়ার ওই মাকনা হাতিটির সঙ্গিনীর অভাবে মেজাজ বিগড়ে আছে। সেই কারণে হাতিটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হস্তীবিশারদ পার্বতী বড়ুয়া বলেন, দাঁতাল হাতির থেকেও এই ধরনের মাকনা হাতি আরও ভয়ংকর। ফলে মাকনাটি যেখানে ঘোরাঘুরি করছে সেখানকার আশপাশের বাসিন্দা ও বনকর্মীদের এ সময় খুবই সাবধানে থাকতে হবে।
তাই বনদপ্তরও মাকনাটিকে চিহ্নিত করতে জলদাপাড়ার জঙ্গলে চিরুণী তল্লাশি চালাচ্ছে। আশপাশের বাসিন্দাদেরও সতর্ক করা হয়েছে। বনদপ্তরও মনে করছে মাকনাটিকে বাগে আনতে না পারলে বিপদ আরও বাড়বে।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও প্রবীণ কাসোয়ান বলেন, প্রাথমিক তদন্তের পর মনে হচ্ছে তিনজনের মৃত্যুর পিছনে একটি মাকনা হাতিই দায়ী। মাকনাটিকে চিহ্নিত করে বাগে আনার চেষ্টা চলছে। মৃত দুই পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি দুই পরিবারের একজন করে সদস্যকে সরকারি চাকরিও দেওয়া হবে। মৃতদের বাড়িতে ভিড় প্রতিবেশীদের। - নিজস্ব চিত্র।