• তৃণভূমিতে পলি, দুর্যোগে জঙ্গলে খাবারের অভাব, লোকালয়ে বারবার হানা হাতির দলের
    বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: গত ৫ অক্টোবরের দুর্যোগের জেরে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের তৃণভোজী প্রাণীদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। দুর্যোগে জলদাপাড়ার বন্যপ্রাণীদের বিচরণক্ষেত্র তোর্সা ও শিসামারা নদীর দুই পাড়ে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি ডলোমাইট মিশ্রিত পলিতে ঢাকা পড়েছে। দুর্যোগের পর প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এখনও পলিতে ঢাকা তৃণভূমি এলাকায় সবুজ ঘাস গজায়নি। বনদপ্তর জানিয়েছে, পলিতে ঢাকা তৃণভূমিতে নতুন সবুজ ঘাস হতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। 

    বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলদাপাড়ায় এই মুহূর্তে ২০০টি হাতি রয়েছে। গন্ডার রয়েছে ৩৩০টি। বাইসন ও হরিণের মতো বন্যপ্রাণীও রয়েছে চার হাজারের উপরে। এভাবে হঠাৎ করে দুর্যোগে খাদ্যে টান পড়ায় হাতির দল এখন প্রতি রাতে জঙ্গলের আশপাশে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। তাতে মানুষ বন্যপ্রাণীর সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় বনকর্তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সেই জন্য নতুন ঘাসের জন্য জলদাপাড়া কর্তৃপক্ষ তিন মাস সময় অপেক্ষা করতে চাইছে। 

    ইতিমধ্যেই জলদাপাড়ার দলছুট একটি মাকনা হাতির হামলায় মাদারিহাটে এক মহিলা ও শিশু সহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার পর মাদারিহাট ব্লক জুড়ে কার্যত জনরোষ তৈরি হয়েছে। বনদপ্তর জানিয়েছে, জলদাপাড়ার ভিতরে তোর্সা ও শিসামারা নদীর দুই পাড়ে বন্যপ্রাণীদের তৃণভূমিতে কথাও এক বা কোথাও দেড় ফুট পর্যন্ত পলি পড়েছে। ওই পলির কারণে তৃণভূমি এলাকায় দুর্যোগের পর এখনও নতুন ঘাস হয়নি। বৃহস্পতিবার বনদপ্তর দুর্যোগের আগে ও পরে জলদাপাড়ার তৃণভূমির ছবি দিয়েছে তাঁদের সরকারি ব্লগে। তাতেই দেখা যাচ্ছে দুর্যোগে বন্যপ্রাণীদের তৃণভূমির কতটা মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পাথুরে পলি মিশ্রিত ওই তৃণভূমি দেখে মনে হচ্ছে নদীর চর এলাকা। 

    জলদাপাড়ার আশপাশে প্রচুর ধান, ভুট্টা ও আনাজ সবজি ফসল রয়েছে। জঙ্গলে খাদ্যে টান পড়ায় ওই ফসলের লোভে হাতির দল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে এখন প্রতি রাতে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। বনকর্মীরা একদিকে হাতি তাড়াতে গেলে অন্যদিকে বের হচ্ছে। কিন্তু বনদপ্তরকে যেটা ভাবাচ্ছে তা হল হাতির সঙ্গে এরপর যদি গন্ডার ও বাইসনও লোকালয়ে বের হয় তাহলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠবে। সেজন্য বনদপ্তরের পক্ষ থেকে আশপাশের বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে। সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানও চলছে। 

    জলদাপাড়ার ডিএফও প্রবীণ কাসোয়ান বলেন, আগামী তিন মাস আমাদের কাছে অত্যন্ত কঠিন সময়। নতুন ঘাসের জন্য আমাদের তিন মাস সময় অপেক্ষা করতেই হবে। এছাড়া অন্য কোনও রাস্তা নেই আর। তারজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। 

     জলদাপাড়ায় তৃণভূমি।
  • Link to this news (বর্তমান)