• জগদ্ধাত্রী আরাধনার প্রস্তুতি শুরু কৃষ্ণনগরে বিশ বছরেই দ্বিগুণ হয়েছে পুজোর সংখ্যা
    বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: দীপাবলির পর্ব মিটতেই জোরকদমে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতি শুরু কৃষ্ণনগর শহরে।মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে সর্বত্র। রাজ্যে উৎসবের মরশুম যখন শেষবেলায় এসে দাঁড়িয়েছে, তখনই জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্মভূমি কৃষ্ণনগর শহর ফিরতে চলেছে উৎসবের মেজাজে। বিগত কয়েক দশকে কৃষ্ণনগর শহরে জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যাও বেড়েছে অনেকটাই। শহরের আদি বাসিন্দাদের কথায়, আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও কৃষ্ণনগর শহরে ৭০-৭৫টি জগদ্ধাত্রী পুজো হতো। বর্তমানে সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। পুলিশ প্রশাসনের দাবি, আজকের সময়ে কৃষ্ণনগর শহরে ১২০-১৩০টি জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। ঐতিহ্য ও সাবেকিয়ানার পাশাপাশি শহরের পুজোর সংস্কৃতিতে যুক্ত হয়েছে থিম ও জাঁকজমক। পাল্লা দিয়ে পুজো কমিটিগুলোর বাজেটও বেড়েছে। 

    দুর্গাপুজো শেষ হতে না হতেই, কৃষ্ণনগর শহরে জগদ্ধাত্রী পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে যায়। শুরু হয়ে যায় প্যান্ডেল ও প্রতিমা তৈরির কাজ। কোনও কোনও পুজো কমিটি আবার দুর্গাপুজোর সময় থেকেই মন্দির চত্বরেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করে। দুর্গাপুজো মিটলে সেই কাজে গতি পায়। কৃষ্ণনগর শহরে কালীপুজোও হয় জাঁকজমকপূর্ণভাবে। তবে শহরের বিভিন্ন জায়গায় কালীপুজোর রাতেও জগদ্ধাত্রী পুজোর প্যান্ডেল তৈরি হতে দেখা যায়। কৃষ্ণনগর শহরের বউবাজার বারোয়ারির ক্ষেত্রেও প্যান্ডেল তৈরি চলছে। কালীপুজো শেষ হতেই বুধবার থেকে পুজোর প্রস্তুতিতে গতি এসেছে। অন্যতম উদ্যোক্তা সুদীপ্ত দাস বলেন, হাতে আর মাত্র এক সপ্তাহ। আমাদের এবারের থিম ‘রাঙামাটির কৃষ্টি’। দীপাবলির আগেই থেকেই আমাদের মণ্ডপসজ্জার কাজ শুরু হয়েছিল। এবার সেই কাজ আরও গতি পাবে। একই ছবি দেখা গিয়েছে বাঘাডাঙা বারোয়ারির ক্ষেত্রেও। সেখানে প্রতিমা তৈরির কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। বর্তমানে সেই কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওই পাড়াতেই মহাধুমধামে মোংলাপাড়া বারোয়ারির কালীপুজোও হয়। যার ফলে এতদিন জগদ্ধাত্রী পুজোর কাজ কিছুটা হলেও চলছিল ঢিমেতালে। তবে বুধবার থেকে সেই কাজে গতি এসেছে। পুজো উদ্যোক্তা সুমিত ঘোষ বলেন, এবার আমাদের থিম নারীশক্তি। পুজোর কাজ আমাদের অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। একই ছবি গোলাপট্টি বারোয়ারি থিম ‘মোদের গরব মোদের আশা’। উদ্যোক্তা অয়ন দত্ত বলেন, আমাদের কাজ চলছে। মণ্ডপসজ্জার কাজে আমরা হাত দিয়েছি। এবার শহরবাসী আমাদের পুজোর থিমে অন্যরকম স্বাদ পাবেন। 

    কৃষ্ণনগর শহরের ইতিহাসের গবেষক সুপ্রতিম কর্মকার বলেন, এই শহরের সঙ্গে জগদ্ধাত্রী পুজো শিকড় জড়িয়ে রয়েছে। বহু পুরোনো জগদ্ধাত্রী পুজো শহরে রয়েছে।‌ তবে ১৫-২০ বছর আগেও এই শহরে ৭০ থেকে ৭৫টা পুজো হতো। এখন পুজোর সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। 

    মুঘল শাসনকালে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বন্দিদশার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনার ইতিহাস। শোনা যায়, আলিবর্দি খাঁর আমলে খাজনা দিতে অস্বীকার করায় কৃষ্ণচন্দ্রকে বন্দি করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। দুর্গাপুজোর সময় তিনি বন্দি থাকায় রাজপরিবারে সেই বছর পুজো হয়নি। মুক্তি পেয়ে দেবী আরাধনা না করতে পারায় গভীর দুঃখ পান রাজা। তখনই স্বপ্নে দেবী জগদ্ধাত্রীর দর্শন পেয়ে তাঁর নির্দেশে রাজা নতুন পুজোর সূচনা করেন। সেই থেকেই কৃষ্ণনগরে দুর্গাপুজোর বিকল্প হিসেবে নবমী তিথিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন হয়, যা আজ তিন শতাব্দী অতিক্রম করেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)