বিদেশে বসে এআই ব্যবহার, বাংলায় ভোটের আগে অশান্তি পাকানোর ছক
বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
অভিষেক পাল , বহরমপুর:
বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ফের বাংলায় অশান্তি পাকানোর ছক কষা হচ্ছে। বিদেশের মাটিতে বসেই তৈরি হচ্ছে প্ল্যান। হাতিয়ার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই। কৃত্রিম মেধাকে ব্যবহার করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে বিকৃত তথ্য, ফেক নিউজ, সাম্প্রদায়িক গুজব। এমনকি বিভিন্ন প্রভাবশালীর মুখ দিয়ে ভুয়ো বক্তব্য পর্যন্ত ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চক্রান্ত চলছে। উদ্দেশ্য একটাই, ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে সাম্প্রদায়িক সমস্যা তৈরি করা। বেছে বেছে টার্গেট করা হচ্ছে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, দুই ২৪ পরগনার মতো সংখ্যালঘু বসবাসকারী জেলাগুলিকে। উৎসবের মরশুমেই তার আঁচ টের পাওয়া গিয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবে গুজব ও ফেক নিউজ ছড়িয়ে বিদ্বেষে উসকানি দেওয়া হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। যদিও বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসতে দেরি হয়নি। শুধু মুর্শিদাবাদ জেলাতেই গুজব ছড়ানোর অভিযোগে প্রায় ১,১০০ ভুয়ো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। ৪৮৬ জনকে চিহ্নিত করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ও এক্স হ্যান্ডল— সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে মূলত এই চারটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকেই বেছে নেওয়া হয়েছে বলে খবর। যৌথভাবে এই চক্রান্তের তদন্তে নেমেছে জেলা পুলিশ ও সাইবার সেল। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও মোট ১১ হাজারের বেশি বিকৃত এবং ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক পোস্ট মুছে ফেলা হয়েছে। পোস্টগুলির আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক করে সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানতে পেরেছেন, বহু অ্যাকাউন্ট বিদেশ ও ভিন রাজ্য থেকে পরিচালিত হচ্ছিল।
বিভ্রান্তিমূলক পোস্টের জন্য পুজোর আগেই লালবাগের এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সেই প্রসঙ্গ টেনেই মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কুমার সানিরাজ বলেন, ‘গত চারমাসে লাগাতার সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং করা হয়েছে। ১০৯৩টি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে।’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মাজিদ ইকবাল খান বলেন, ‘এই কাজে যুক্ত বহু অ্যাকাউন্ট বিদেশ ও অন্য রাজ্য থেকে পরিচালিত হচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষকে বলব, কোনও তথ্য যাচাই না করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করবেন না।’ এই ঘটনার পর ‘হ্যাশট্যাগ মুর্শিদাবাদ ফেক নিউজ’ ও ‘হ্যাশট্যাগ ভেরিফাই বিফোর শেয়ার’ ইত্যাদি সচেতনতামূলক পোস্টও ভাইরাল হয়েছে। স্থানীয় তরুণ-তরুণীরা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও ভুয়ো খবর বিরোধী প্রচারে অংশ নিচ্ছে।
মুর্শিদাবাদের সাইবার ক্রাইম থানার আইসি উৎপলকুমার সাহা বলেন, ‘কিছু মানুষ পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য সমাজমাধ্যমগুলিকে ব্যবহার করছে। সেই প্রোফাইলগুলি মুছে দেওয়ার পাশাপাশি কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।’