সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ রেল বাজার ফেরিঘাটে জেটি থাকলেও উল্টোদিকে মায়াপুর যাবার হুলোর ঘাটে কোনও জেটি নেই। ফলে, প্রতিদিন হুলোর ঘাটের অস্থায়ী বাঁশের মাচা দিয়ে বিপজ্জনকভাবে পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ীদের। একই সমস্যায় পড়ছেন মায়াপুরে বেড়াতে আসা পুণ্যার্থী ও পর্যটকরা। ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষের দাবি, বারবার স্থায়ী জেটির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে আবেদন করা হলেও এখনও পর্যন্ত স্থায়ী কোনও জেটি হয়নি। ফলে প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ। ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষের দাবি, অবিলম্বে মায়াপুর হুলোর ঘাটে জেটির ব্যবস্থা করা হোক ।
উল্লেখ্য, প্রতিদিন স্বরূপগঞ্জ রেল বাজার ফেরিঘাট ও মায়াপুর হুলোর ঘাট দিয়ে বেশ কয়েক হাজার মানুষ পারাপার করেন। বাইরে থেকে আসা তীর্থযাত্রীরা মায়াপুর ইসকন মন্দির সহ বিভিন্ন মঠ মন্দির দর্শন করতে এই ঘাট দিয়েই যাতায়াত করেন। নবদ্বীপ ব্লকের অধীনে রয়েছে এই ফেরিঘাটগুলি। জলঙ্গি নদী পার হয়ে এই ঘাটটির একদিকে স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের রেল বাজার ঘাট, বিপরীত দিকে মায়াপুর-বামুনপুকুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের মায়াপুর হুলোর ঘাট। এই ঘাট দুটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক›শো মানুষ মায়াপুর ইসকন মন্দির সহ বিভিন্ন মঠ মন্দিরে কর্মসংস্থানে যান।এছাড়া কৃষ্ণনগর স্টেশন হয়ে যেসব ভক্ত, পুণ্যার্থী ও পর্যটকরা মায়াপুর মন্দির দর্শনে আসেন, তাঁদের অধিকাংশ এই জলপথ দিয়ে যাতায়াত করেন।
ভোর পাঁচটা থেকে এই জলপথে পারাপার শুরু হয়ে যায়। রাত ১১টা পর্যন্ত এই ফেরিঘাট দিয়ে নৌকা চলাচল করে। অনেকেই এই ফেরিঘাট দিয়ে মোটরসাইকেল, সাইকেল নিয়ে জলঙ্গি নদী পার হন। এই ঘাট পার হতে মাথাপিছু ভাড়া ৩ টাকা। আর সাইকেল সহ মাথা পিছু ৬ টাকা করে ভাড়া দিতে হয় । মোটরসাইকেল ১০ টাকা। এছাড়া বেশি রাতে পারাপারের জন্য নৌকা ৪০ টাকা দিয়ে রিজার্ভ করতে হয়। এই ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন প্রায় আট হাজার মানুষ।
নবদ্বীপ জলপথ পরিবহন সমবায় সমিতি সম্পাদক সুশান্ত হালদার বলেন, হুলোর ঘাটের এই ফেরিঘাট জেটির বিষয়ে এর আগেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর আমাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এমনকী ওই দপ্তরের আধিকারিকরা দু’ দুবার ফেরিঘাট পরিদর্শনও করেছেন । দ্রুত জেটি হবে বলে আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু এখনও জেটি হয়নি। অস্থায়ী বাঁশের মাচার ওপর দিয়ে পারাপার হতে সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। বিশেষ করে দোল, ঝুলন , জন্মাষ্টমী, রাধাষ্টমী উৎসবের সময় খুবই ভিড় হয়। ফলে আমরা আতঙ্কের মধ্যেই থাকি। এই দুটি ঘাটে ২০ জন কর্মচারী কাজ করেন।
স্বরুপগঞ্জ পঞ্চায়েতের ফকিরতলার বাসিন্দা খোকন ঘোষ বলেন, আমার মায়াপুরে রেডিমেড দোকান আছে। প্রতিদিন ভোর বেলায় নৌকায় নদী পার হয়ে মায়াপুর যেতে হয়। ঝড়- বৃষ্টি এবং জলঙ্গির জল বাড়লে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। অবিলম্বে এই ঘাটটিতে জেটির প্রয়োজন। স্বরূপগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের বাসিন্দা রাজেশ দেবনাথ বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিদিন মায়াপুর যেতে হয়।। যখন নদীর জল বাড়ে- কমে তখন বাঁশের মাচার সাথে নৌকার অবস্থান উঁচু-নিচু হয়ে যায়, ফলে সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করতে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। মায়াপুর বামুনপুকুর দু›নম্বর পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য স্বপন মন্ডল বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা শুনে আসছি জেটি হবে। জেটির জন্য একাধিকবার আবেদনও করে আসছি।
নবদ্বীপ পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, মায়াপুর হুলোরঘাটে জেটির দাবি দীর্ঘদিনের। ওই এলাকায় একটি জেটি করার চিন্তাভাবনাও রয়েছে। এখনও জায়গা ঠিক হয়ে ওঠেনি। জায়গা ঠিক হলে ওই এলাকায় জেটি তৈরি হবে।