সংবাদদাতা, তেহট্ট: চাষের আধুনিক পদ্ধতি যতটা উপকারী, তার থেকে কোনও অংশেই কম অপকারী নয়। কথাটা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন তেহট্ট মহকুমার পটল চাষিরা। অতিরিক্ত কীটনাশকের অপকারীতা ফল ফলতে শুরু করেছে। পটলের ফলন হ্রাসের আশঙ্কায় ভুগছেন তাঁরা। কারণ, অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে মৃত্যু হচ্ছে ফসলের পরাগ মিলনকারী কীটপতঙ্গের। সেইসব কীটপতঙ্গ না থাকায় পরাগ মিলন হচ্ছে না। ফলে ফসলের উৎপাদন ৬০-৭০ শতাংশ কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তেহট্ট মহকুমা এলাকার পটল চাষিরা। তাই পটলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে ১০০ শতাংশ করতে চাষিরা ভোররাতে পটলের জমিতে গিয়ে পটল ফুলে পরাগ মিলনের জন্য জমি থেকে পুরুষ ফুল তুলে তার রেনু স্ত্রী ফুলের সঙ্গে মিলন করাচ্ছেন। পটল চাষিদের ভাষায় এই প্রক্রিয়াটিকে ‘ফুল ঠেকানো’ বলা হয়।
পটল চাষি হরিপদ সরকার, স্বপন বিশ্বাস, বলরাম পালরা বলেন, ফসলের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় মারার জন্য বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। কীটনাশক প্রয়োগের ফলে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ পোকামাকড়ের পাশাপাশি উপকারী কীটপতঙ্গগুলোরও মৃত্যু হয়। উপকারী কীটপতঙ্গগুলির মৃত্যুর কারণে পরাগ মিলন সঠিকভাবে না হওয়ায় ফসলের উৎপাদন কমে যায়। যে কারণে আমাদের মতো সমস্ত পটল চাষিকেই ভোরবেলায় এসে জমিতে ফুটে থাকা প্রতিটা স্ত্রী ফুলের সঙ্গে পুরুষ ফুলের মিলন ঘটাতে হচ্ছে। এই কাজটি করতে না পারলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ফলন কমে যাবে। ফলন কমে গেলে চূড়ান্ত আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে আমাদের।
তেহট্ট-১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক তপনচন্দ্র রায় বলেন, পটলের ভালো ফলন পেতে হলে খেতে দশটি স্ত্রী গাছের সঙ্গে একটি পুরুষ গাছ অবশ্যই রাখতে হবে। অনেক চাষি এই অনুপাতে পুরুষ গাছ রাখতে চান না। পুরুষ গাছের সংখ্যা হ্রাস পটলের ফলন কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ। এছাড়াও বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগের ফলে ফসলের উপকারী-অপকারী সমস্ত ধরনের পোকামাকড়, মৌমাছি, কীটপতঙ্গের মৃত্যু ঘটে। এই উপকারী কীটপতঙ্গের মৃত্যুর ফলে পরাগ মিলনের ব্যাঘাত ঘটে। তার ফলেই পটল ফলন অনেকাংশে কমে যায়। সে ক্ষেত্রে ভোরবেলায় চাষিদের কথায় ‘ফুল ঠেকানো’-তে ভালো ফল হয়। পটলের ফলন বাড়ে। বিশদে জানতে হলে চাষিদের সরাসরি কৃষিদপ্তরের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। পটলের ফুল ঠেকানো হচ্ছে। -নিজস্ব চিত্র