স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নার্সের উপর হামলা ও শ্লীলতাহানিতে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন, মহম্মদবাজারে গ্রামীণ এলাকায় পরিষেবায় সমস্যা
বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা, সিউড়ি: বীরভূমের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নার্সিং কর্মীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনা সামনে আসতেই আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা। এই ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছে জেলাজুড়ে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ও নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে সরব হতে শুরু করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’- এর তরফে রীতিমতো লিখিত ভাবে রাজ্যের সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যান্য আরও বেশ কয়েকটি নার্সিং সংগঠনের দাবি, রাজ্যজুড়ে বারংবার এই আক্রমণের ঘটনা ঘটলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উদাসীন প্রশাসন। এইভাবে কাজ করা মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। এই ধরনের একের পর এক ঘটনা বন্ধ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।
উল্লেখ্য, বুধবার বিকেলে মহম্মদবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্গত কাঁইজুলি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক মদ্যপ দুষ্কৃতীর ছোড়া পাথরের আঘাতে মারাত্মক ভাবে জখম হন সেখানকার নার্স (ফার্স্ট এএনএম) রিনা মণ্ডল। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের দাবি, জখম ওই নার্সের বাড়ি সিউড়িতে। সিউড়ি থেকেই দৈনিক যাতায়াত করেন কর্মক্ষেত্রে। পুলিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার ছুটির পর সাব-সেন্টার বন্ধ করে তিনি যখন বেরচ্ছিলেন, সেই সময়ে এক মদ্যপ তাঁকে উত্যক্ত করে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বাধা দিলে রাস্তায় পড়ে থাকা পাথর তুলে নার্সের মাথায় ভীষণ জোরে আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মী। বেগতিক বুঝে চম্পট দেয় ওই দুষ্কৃতী। খবর যায় পুলিশে। ছুটে আসেন স্থানীয়রাও। পুলিশ পৌঁছে ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধার করে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অবশ্য রাজীব কাহার নামের ওই দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করে মহম্মদবাজার থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার দৃতকে বীরভূম জেলা আদালতে তোলা হলে ধৃতের ১৪ দিনের জেল হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক।
এই ঘটনায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের দাবি, মহকুমা কিংবা জেলা হাসপাতালগুলিতে তাও পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। কিন্তু গ্রামগঞ্জের কয়েক হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভীষণভাবে অসুরক্ষিত। সেখানে নিরাপত্তার কোনও বালাই নেই। গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে আগামী সোমবার ওয়েস্ট বেঙ্গল নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন ও কো-অর্ডিনেশন কমিটির তরফে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংগঠনের জেলা সভাপতি ছন্দা চট্টোপাধ্যায় বলেন, কর্তব্য পালন করতে গিয়ে বারংবার নার্সিং কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির নিরাপত্তার ব্যবস্থার জোরদার করার জন্য বহু আবেদন করেছি প্রশাসনের কাছে। কিন্তু এনিয়ে কোনও পদক্ষেপই করেনি প্রশাসন। এভাবে চলতে থাকলে নার্সিং স্টাফ সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষে কাজ করাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল নার্সেস ইউনিটির জেলা সভাপতি পারমিতা কর বলেন, বছর দুয়েক আগে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এক নার্সিং কর্মীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির অবস্থা তো আরও ভয়ানক। চাকরি করছি না যুদ্ধ ক্ষেত্রে আছি বোঝা মুশকিল। -নিজস্ব চিত্র