সংবাদদাতা, রামপুরহাট: গায়ের রং ফর্সা হলেই তিনি সুন্দরী। গায়ের রং নিয়ে সমাজের এই প্রচলিত ধারণার দরুণ চীনে তৈরি ফেয়ারনেস ক্রিমে ছেয়ে গিয়েছে রামপুরহাট। কিন্তু ফর্সা ত্বক পেতে গিয়ে যে শরীরের বারোটা বাজছে তা ভেবে দেখছেন না আধুনিকারা। চীনা ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহারে বাড়ছে চর্মরোগ। যা রূপ নিচ্ছে মারণ রোগের। ইদানীং ত্বকের নানা সমস্যা, ঘা নিয়ে ভুক্তভোগী রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে দাবি চিকিৎসকদের একাংশের। তাঁদের মতে, সাময়িক এই সৌন্দর্য যে কত রোগ ডেকে আনতে পারে, এই ক্রিমগুলো যে কীভাবে শরীরের ক্ষতি করছে, তা ধারণারও বাইরে অনেকের। তাই এই ধরণের ক্রিম ব্যবহার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
রামপুরহাটে যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে বিউটি পার্লার। কলকাতা থেকে কিছু যুবতী এখানে কাজ করেন। তাঁদের কাছে শিখে এই পেশায় নামছেন গ্রামগঞ্জের মেয়েরা। বিউটি পার্লারে কালো মেয়েও হয়ে উঠেছে ফর্সা। তাঁদের রূপবতী হয়ে উঠতে গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে চীনা ক্রিম। চাহিদা থাকায় গ্রামগঞ্জের মুদিখানার দোকানেও দেদার বিক্রি হচ্ছে এইসব ক্রিম। কারণ, এইসব ক্রিম মেখে দ্রুত ফর্সা ত্বক পাওয়া যাচ্ছে। নিয়মানুযায়ী, কসমেটিকস বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট লাইসেন্স লাগে। ওষুধের দোকানদাররাও সেই লাইসেন্স ছাড়া এই ধরনের ক্রিম বিক্রি করতে পারেন না। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করে মুড়ি মুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে চীনা ক্রিম। যার বাজারও ভালো। ত্বক ফর্সা করার জন্য এই সব ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহারের কারণে চর্ম রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ব্যবহার বন্ধ করলে ত্বক আরও কালো হচ্ছে। এমনকী ঘা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ফেয়ারনেস ক্রিমের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে মেমব্রানাস নেফ্রোপ্যাথি (এমএন) বেড়েই চলেছে। এটি এমন একটি অবস্থা যা কিডনি ফিল্টারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমএন হল একটি অটোইমিউন রোগ যার ফলে নেফ্রোটিক সিনড্রোম হয়। এটি এমনই একটি কিডনি ব্যাধি যা প্রস্রাবের মাধ্যমে অত্যধিক প্রোটিন নির্গত করে দেয়। চিকিৎসকদের মতে, এই ক্রিম শুধু ত্বক বা কিডনির স্বাস্থ্যের সমস্যা নয়, এটি একটি জনস্বাস্থ্য সংকটও।
এ ব্যাপারে রামপুরহাটের প্লাস্টিক অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ ও জেনারেল সার্জেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, চীনা ক্রিমগুলিতে কিছু ক্ষতিকারক জিনিস ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন হাইড্রো স্টেরয়েড, মার্কারি, হাইড্রো কুইনন, সীসা ব্যাপক হারে থাকে। সেসবের নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বক পাতলা, কালো দাগ ও ঘা হয়ে যাচ্ছে। প্রায়ই এই ধরনের রোগী আসছে। তাছাড়া এই ধরনের ক্রিম ব্যবহারের ফলে চামড়ায় ভাঁজ পড়ছে ও ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে। আরও কিছু রোগী আসছেন, যাঁদের চোখের পাশে কালো হয়ে গিয়েছে। চোখের নীচের চামড়া ঝুলে পড়েছে। তিনি বলেন, এই ধরনের ক্রিম ব্যবহার না করাই ভালো। কিছু এফডি অনুমোদিত ব্রাইটনেস ক্রিম রয়েছে, সেগুলিরও ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় আছে। দু’-তিনমাসের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু অনেকেই বছরের পর বছর ব্যবহার করে আসছেন। স্বাভাবিকভাবেই চামড়ার ক্ষতি হচ্ছে।