বাজি পোড়ানোর প্রতিবাদ করায় প্রবীণ ভাই-বোনকে ব্যাপক মার, এলগিন রোডের ঘটনায় অভিযোগ নিতে ‘গড়িমসি’ পুলিশের
বর্তমান | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কালীপুজোর রাতে দেদার শব্দবাজির দাপটে নাজেহাল হতে হয়েছে বহু মানুষকে। আতশবাজি সংক্রান্ত সরকারি বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাতভর চলেছে দৌরাত্ম্য। এই অবস্থায় নিজের আবাসনে শব্দবাজির দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন ভাই-বোন। তাঁরা দু’জনেই ষাটোর্ধ্ব। এই প্রতিবাদের জন্য তাঁদের কপালে জুটেছে বেধড়ক মার। তবে শহরের এই দুই প্রবীণ বাসিন্দার দুর্ভোগের এখানেই শেষ হয়নি! আক্রান্তদের দাবি, মারধরের বিষয়ে ভবানীপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে প্রথমে তাঁদের ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। অভিযোগ নিতে নানা গড়িমসি করে। অবশেষে বুধবার অভিযোগ গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার এফআইআরের কপি দেয় ভবানীপুর থানা।
এলগিন রোডের বাসিন্দা অনুপমা চৌধুরী ও তাঁর ভাই নির্মল দাস। তাঁদের দাবি, কালীপুজোর দিন সন্ধ্যা থেকে দেদার শব্দবাজি ও আতশবাজি ফাটানো হচ্ছিল আবাসনের নীচে। গোটা চত্বর ধোঁয়ায় ভরে যায়। অনুপমাদেবীর হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে। কয়েকমাস আগেই তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। ধোঁয়ার জন্য তাঁর এবং তাঁর ভাইয়ের তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এখানেই শেষ নয়! অভিযোগ, আবাসনের নীচ থেকে দেদার শেল ও রকেট, হাওয়াই জাতীয় বাজি পোড়াতে শুরু করে জনা পাঁচেক যুবক। বৃদ্ধার ঘরে আগুনের ফুলকি ঢুকে যায়। ভয়ে জানালা বন্ধ করে দেন তাঁরা। এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে নীচে নেমে তাঁরা বাজি পোড়ানো বন্ধ করার অনুরোধ জানান। কিন্তু ওই যুবকরা তাঁদের কথায় কর্ণপাত করেনি। এনিয়ে দু’পক্ষের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মধ্যেই নির্মলবাবুকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁরে মুখ ও বুকে ঘুসি মারা হয়। সেদিন রাতেই ভবানীপুর থানার দ্বারস্থ হন দু’জন। অনুপমাদেবী বলেন, ‘আমরা অভিযোগ করতে গেলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। ডিউটি অফিসার বলেন, অনেক জায়গায় আগুন লেগেছে। সেখানে যেতে হবে। আপনি পরে এসে অভিযোগ জানাবেন।’ তাঁর আরও দাবি, অভিযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য তো দূর-অস্ত, কোনওরকম সহমর্মিতা দেখানো হয়নি পুলিশের তরফে। বুধবার ফের থানায় গেলে অভিযোগ নেয় পুলিশ। নির্দিষ্টভাবে পাঁচজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার জন্য আর্জি জানান অনুপমা দেবী। তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। লালবাজার জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলি খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হবে। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।