• উধাও তৃণভূমি, খাদ্যসঙ্কটে বন্যপ্রাণীদের ভিড় জনপদে!
    এই সময় | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • এই সময়, আলিপুরদুয়ার: দুর্যোগে নষ্ট হয়েছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের তৃণভূমি। টান পড়েছে হাতি, গন্ডার, বাইসন ও হরিণের খাদ্যভাণ্ডারে। এই অবস্থায় মানুষ ও বন্যপ্রাণের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন বনকর্তারা। ওই সংরক্ষিত অরণ্যে রয়েছে কমপক্ষে ২০০ বুনো হাতি। গন্ডারের সংখ্যা তিনশোর বেশি। বাইসন ও বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ মিলিয়ে সংখ্যাটা চার হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এতদিন তৃণভোজী বাসিন্দাদের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ছিল তোর্সা ও শিশামারা নদীর বিস্তীর্ণ তৃণভূমি।

    কিন্তু ৪ অক্টোবর রাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে তোর্সার পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে থাকা তৃণভূমি নদীর পলিতে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। সেখানে নতুন করে ঘাস গজাতে কম পক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। সামনে আবার শুখা মরশুম। খাবারে টান পড়লেই জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের আশপাশে লোকালয়ে হানা দেবে বন্যপ্রাণীরা। ফলে সামনে কঠিন সময় বলে মনে করেন জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও পারভিন কাসোয়ান। তিনি বলেন, ‘জলদাপাড়ায় তৃণভূমি বলে আর কিছু নেই। কমপক্ষে তিন মাস আমাদের কঠিন সময় পার করতে হবে। আমরা উদ্বিগ্ন। খাবারের অভাবে বন্যপ্রাণীদের লোকালয়ে আসার প্রবণতা বাড়বেই। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

    জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের পূর্ব দিকে রয়েছে মুনসিপাড়া, প্রধানপাড়া, নতুনপাড়া, শালকুমার হাট, মেন্দাবাড়ি। পশ্চিমে মধ্য মাদারিহাট, ছেকামারি মধ্য খয়েরবাড়ি ও দক্ষিণ খয়েরবাড়ি। সেখানে প্রচুর ধান চাষ হয়েছে। খাবারের সন্ধানে ইতিমধ্যে প্রতি রাতে হাতির পাল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে হানাদারি শুরু করেছে। পেটে টান পড়লে গন্ডার থেকে বাইসন, সবাই লোকালয়ে বেরিয়ে আসতে পারে বলে আশঙ্কা বনকর্তাদের। প্রতি রাতে হাতি ও অন্য বন্যপ্রাণীদের জঙ্গলে ফেরাতে গিয়ে ক্রমশ কাহিল হয়ে পড়ছেন বনকর্মীরা। লোকালয়ে হাতি তাড়াতে গিয়ে জনরোষের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের। এই সম্ভাবনা যে আরও বাড়তে পারে, স্বীকার করেছেন বনকর্মীরা।

    ইস্টার্ন ডুয়ার্স ট্যুরিজ়ম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘আসলে মানুষের কারণে হাতিদের স্বীকৃত করিডোর বিনষ্ট হয়েছে। ওরা লোকালয়ে আসে ও ফিরে যায় নির্দিষ্ট পথ ধরে। হাতিরা এই পরম্পরা মেনে চলে। যখনই বিঘ্ন ঘটে, তখনই বিপত্তি তৈরি হয়। জলদাপাড়ায় খাবারের অভাব হলে পেট ভরাতে ওরা লোকালয়ে আসবেই। মানুষকে সাবধান হতে হবে বাঁচার তাগিদে। এ বড় কঠিন সময়।’

    আরও একটি কারণে চিন্তায় বনকর্তারা। খাবারের খোঁজে কিছু গন্ডার, হাতি–সহ তৃণভোজীরা হাই ফরেস্টে ভিড় জমাতে শুরু করেছে। হাতের নাগালে অসংখ্য বন্যপ্রাণীদের পেয়ে চোরা শিকারিরা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। তাদের সুরক্ষা এখন বন দপ্তরের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

  • Link to this news (এই সময়)