আগরতলা: অনুপ্রবেশ বন্ধের দাবি-সহ আট দফা দাবিতে নাগরিক সমাজ বা সিভিল সোসাইটির ডাকা বনধকে কেন্দ্র করে অশান্ত ত্রিপুরা। ঘটনার ধলাই জেলার কমলপুর মহকুমার শান্তির বাজারের। জানা গিয়েছে, শান্তির বাজারের এলাকা-সহ একাধিক ঘর বাড়ি, বাজার ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় কাঠগড়ায় তিপরা-মথার উগ্র সমর্থকরা।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। তিপরা সিভিল সোসাইটির ডাকা ২৪ ঘন্টা বন্ধের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শান্তিরবাজার এলাকা। বৃহস্পতিবার বিকালবেলায় বনধের সমর্থকরা শান্তিরবাজার বাজারে ঢুকে বনধের পিকেটিং করার সময় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করেন। তখন উভয়পক্ষে বাদনুবাদ হয়। এরপর বনধ সমর্থকরা আরও বেশি করে বাজারে প্রবেশ করেন। বেশ কিছু দোকানে লুটপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ। উত্তেজনার মাঝে ব্যবসায়ীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
অভিযোগ, সেই সময়েই বনধ সমর্থকরা বাজারে থাকা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন নেভাতে গেলে অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হইহল্লার মাঝেই মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সমুদ্র দেব্বর্মার মাথায় ইঁট পড়ে। কমলপুর মহকুমার সালেমার ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার অভিজিৎ চৌধুরী ঘটনাস্থলে আসলে তাঁর গাড়িতেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। হামলাকারীদের আঘাতে ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের মাথা ফাটে। অন্যদিকে বনধ সমর্থকদের ছোড়া ইঁটের ঘায়ে শান্তির বাজারের এক ব্যবসায়ী বিপ্লব দেব 'র একটি চোখ থেতলে যায়। আহত হন কমলপুর আর ডি দপ্তরের এক ইঞ্জিনিয়ার অনিমেষ সাহাও।
আহতদের কমলপুর হাসপাতালে নিয়ে আসে অগ্নি নির্বাপক বাহিনী। পরিস্থিতি ভায়াবহ রূপ নিচ্ছে দেখে রাতে পুলিশ ওপেন ফায়ারিং ও লাঠিচার্জ করে বলে জানা গিয়েছে। পরিস্থিতি নাগালে আনতে ধলাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৬৩ বি এনএস আইন জারি করা হয়েছে।
প্রচুর সংখ্যায় ত্রিপুরা পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী ও টিএসআর শান্তির বাজার এলাকায় মোতায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার রাতে আহত বিডিও, ইঞ্জিনিয়র, ব্যবসায়ীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জিবি হাসপাতালে রেফার করা হয়। খবর পেয়ে রাতেই আহতদের দেখতে জিবি হাসপাতালে যান প্রদেশ বিজেপি সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
পরবর্তী সময়ে জিবি হাসপাতাল প্রাঙ্গনে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রদেশ বিজেপি সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য বলেন, "সিভিল সোসাইটির নাম দিয়ে জনজাতিভিত্তিক ২৪ ঘন্টার বনধ ডাকা হয়েছে, আগরতলা-সহ সারা রাজ্যে। বনধে কি নক্কারজনক ঘটেছে তার সাক্ষী ত্রিপুরাবাসী। আর যে ইসুগুলি নিয়ে এই বনধ ডাকা হয়েছে সেই ইস্যু নিয়ে বিধানসভাতে আলোচনা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সাফ জবাব দিয়েছেন এবং ত্রিপাক্ষিক চুক্তি নিয়ে যে সমস্ত আলোচনা ও কথা হয়েছে সেই ব্যাপারে দিল্লি সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এই আন্দোলনের নাম দিয়ে কমলপুর শান্তির বাজারে যে নিন্দনীয় ঘটনা ঘটল তা অত্যন্ত সমালোচনাযোগ্য।"
রাজীব ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, এটা কোন ধরনের সিভিল সোসাইটি যারা রাজ্য়ের মানুষকে অন্দোলনের নামে আহত করলেন? কর্তব্যরত বিডিও, সরকারি ইঞ্জিনিয়রদের প্রাণে মারার প্রচেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন সাংসদ। সিভিল সোসাইটির নাম দিয়ে রাজ্যে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে তা কোনমতেই বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঙ্কার দিয়েছেন প্রদেশ বিজেপি সভাপতি। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, হামলার সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার আক্রান্ত ঘটনায় রাজ্যের সিভিল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অসীম সাহা নিন্দা জানিয়েছেন। তারা সরকারের সঙ্গে কর্তব্যরত সিভিল সার্ভিস অফিসারদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন শ্রী সাহা। অন্যদিকে শান্তির বাজারে তিপরা মথার দুষ্কৃতিকারীদের আক্রমণকে কেন্দ্র করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা।
অন্যদিকে বনধ সমর্থকরা ত্রিপুরার খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়া মহকুমার মুঙ্গিয়াকামী বাজারে বিজেপির শক্তি কেন্দ্রে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ। এতে বিজেপির প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেম। অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। জানা গিয়েছে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর একটি জনসভা রয়েছে ওই এলাকাতে। ফলে শান্তি বজায় রাখতে এলাকায় পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে।