• সেজে উঠছেন চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী, চালচিত্রেও থিমের ছোঁয়া
    প্রতিদিন | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • নব্যেন্দু হাজরা: চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় আলো, মণ্ডপে থিমের বৈচিত্র‌ ছিলই। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে জগদ্ধাত্রীর অঙ্গসজ্জায় শোলার সাজেও এখন থিমের ছোঁয়া। প্রতিমার চালচিত্রে শোলার সাজে রামায়ণ, মহাভারতের মতো পৌরাণিক কাহিনি থেকে বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ, বাংলার স্থাপত‌্য, বিষ্ণুপুরের ডোকরা, টেরাকোটা, বৃক্ষরোপণের মতো হরেক থিমের বন‌্যা। যা দেখে দর্শনার্থীদের চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ‌্য। আগামী সোমবার ষষ্ঠী। তার আগে গঙ্গা তীরবর্তী শহরের অলিগলিতে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। বর্ধমানের বনকাপাসি থেকে আসা শয়ে শয়ে শিল্পীরা দিনরাত এক করে নতুন নতুন শিল্পকলা ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত। এক পুজো উদে‌্যাক্তার দাবি, বছর তিন-চার ধরে এই শিল্পকলায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে চন্দননগরে।

    চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই নতুন নতুন আলোর থিম। সঙ্গে সাবেকি প্রতিমা। তার সঙ্গে শোলার সাজে এখন থিমের ছোঁয়া। এসবের টানেই জেলা ছাড়িয়ে রাজ্য, রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশ থেকেও পর্যটকের ভিড় উপচে পড়ে গঙ্গালাগোয়া প্রাচীন এই ঐতিহাসিক শহরে। এর সঙ্গে তো এখানকার প্রতিমা নিরঞ্জনে আলো ঝলমলে শোভাযাত্রা রয়েইছে। ভদ্রেশ্বর, মানকুণ্ডু, চন্দননগর মিলিয়ে কমবেশি ১৮০টি পুজো চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির অধীনে। সব বারোয়ারিতেই এখন তাই চূড়ান্ত ব‌্যস্ততা। বিগত কয়েক বছর ধরেই এই শোলার সাজেও এসেছে অভিনবত্বের ছোঁয়া। বর্ধমানের শিল্পীদের নৈপুণ্যে মায়ের অঙ্গসজ্জাতেও লেগেছে থিমের বৈচিত্র। বর্ধমান জেলার কাটোয়া এলাকার বনকাপাসি গ্রাম থেকে চন্দননগরে এসেছেন শিল্পীরা। চলছে দিনরাত এক করে কাজ।

    মধ‌্যাঞ্চল বারোয়ারির এবার প্রতিমার অঙ্গসজ্জ‌ার থিম বিষ্ণুর দশ অবতার। ১২ মাসের উৎসবগুলোকে তুলে ধরা হচ্ছে কুণ্ডুঘাট দালানের অঙ্গসজ্জ‌ায়। প্রতে‌্যকটি উৎসবকেই এবার মা জগদ্ধাত্রীর চালচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। হরিদ্রাডাঙায় এবার হচ্ছে থিম হচ্ছে মাইথোলজির উপর। পাদ্রিপাড়ার থিম এবার বাংলার স্থাপত‌্য, বিষ্ণুপুরের ডোকরাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে, উর্দিবাজারের প্রতিমার অঙ্গসজ্জায় টেরাকোটা। বোরোকালীতলায় রামায়ণ, খলিসানি বারোয়ারিতে সবুজায়ন। এমনই অধিকাংশ বারোয়ারিই এখন জগদ্ধাত্রী প্রতিমার শোলার সাজে নানা থিমের অবতারণা করছে।

    চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ এ বিষয়ে জানান, বিগত ৪ বছর থেকে মায়ের অঙ্গসজ্জায় শোলার সাজে থিমবৈচিত্রের প্রভাব বেশি করে বাড়তে শুরু করেছে। কখনও রামায়ণ, মহাভারত, কখনও আবার পুরাণের বিভিন্ন কাহিনি, আরও অনেক থিম হচ্ছে। তাতে মায়ের রূপ যেন আরও খুলছে। ২০২১ সালে যখন করোনার জন্য শোভাযাত্রা হয়নি, তখন থেকেই মায়ের অঙ্গসজ্জায় থিম-বৈচিত্রের কাজে পুজো কমিটিগুলো খরচ বাড়াতে শুরু করে। তার পর দেখা যায় এই শিল্পকলার প্রতি বহু মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে। বর্ধমানের বনকাপাসি থেকে শোলাশিল্পীদের দল এসেছে চনন্দনগরে। তাঁদের মধে‌্য অন‌্যতম শিল্পী আকাশ পাল এবার প্রায় ২০টি প্রতিমার অঙ্গসজ্জ‌ার কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রথাগত সাজের পাশাপাশি অঙ্গসজ্জায় থিমের কাজও বেড়ে চলেছে। আমাদের ওই গ্রাম থেকে অনেক শিল্পীই আসে এখানে কাজ করতে। দিনে দিনে এখানে এই শোলার থিমের চাহিদা বাড়ছে।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)