• হড়পা বানের পরে ক্রমাগত হাতির হামলায় মৃত ৫! উত্তরবঙ্গের জঙ্গল লাগোয়া তিন জেলায় উদ্বেগ
    প্রতিদিন | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার, শিলিগুড়ি : হড়পা বানে বিধ্বস্ত উত্তরের জঙ্গল লাগোয়া তিন জেলায় ক্রমশ বেড়েই চলেছে বুনো হাতির হামলা। অক্টোবরের মাত্র চারদিনে ৫ জনের মৃত্যু হল বুনোদের হামলায়। জখম হয়েছেন অন্তত ১০ জন। সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার জলদাপাড়া সংলগ্ন মাদারিহাটে। বনকর্মীদের একাংশের মতে বন্যায় বিধ্বস্ত জঙ্গলে হাতিদের প্রিয় খাবার ঢাড্ডা, পুরুন্ডির অস্তিত্ব নেই বললে চলে। ওই কারণে খাবারের খোঁজে প্রায় রাতে হাতির দল পাড়ি জমাচ্ছে লোকালয়ে। কখনও দলছুট হাতি হানা দিচ্ছে বাড়িতে। যুতসই খাবার না-পেলেই মারমুখী হয়ে উঠছে বুনোরা।

    স্কুল বাড়ি, গৃহস্থের ঘরদোর, ফসল তছনছ করছে। মানুষ মারছে। বানভাসি এলাকায় এভাবে হামলার ঘটনা বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন বনদপ্তর। যদিও প্রশ্ন উঠেছে বৃহস্পতিবার হাতির হামলায় দেড় বছরের শিশু সহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ৩১ মে আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটায় হাতির হামলায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়। তখন তো হড়পা বান ছিল না। তবে কি হাতিদের স্বভাব পালটে যাচ্ছে। যদিও বন দপ্তরের কর্তারা জানিয়েছেন, এপ্রিল-মে মাসে অসহ্য গরম ছিল। ওই সময় জল ও খাবারের খোঁজে বুনোরা লোকালয়ে পাড়ি জমায়। সেখানে বাধা পেয়ে মারমুখী হয়ে ওঠে। শুধু এপ্রিলের পনেরো দিনে হাতির হামলায় সাতজনের মৃত্যু হয় উত্তরে। তাদের মধ্যে এক সপ্তাহে চারজনের মৃত্যু হয়। বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলের নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় হাতি মারমুখী হয়ে ওঠার ঘটনা বেশি নজরে এসেছে।

    এলাকাগুলো হল জলপাইগুড়ির ওদলাবাড়ির কাছে কাঠামবাড়ির জঙ্গল, কালিম্পংয়ের সিবচু, বাতাবাড়ি, মেটেলি, সুখানি বস্তি, মোরাঘাট, বামনডাঙা, লাটাগুড়ি, বিচাভাঙা, টুন্ডু, নাগরাকাটা, কালামাটি, বানারহাট, আলিপুরদুয়ারের দলগাঁও, বীরপাড়া, রামঝোরা, মাদারিহাট, ফালাকাটা, ডিমডিমা। এছাড়াও জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার হাতির ষোলটি করিডোর এলাকা এখন রীতিমতো ভয়াবহ। মারাত্মক স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে মোরাঘাট। এখানে অন্তত ত্রিশটি হাতি সব সময় থাকে। হড়পা বানে এবার মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জলদাপাড়া ও গরুমারা জঙ্গল। ওই দুই জঙ্গলের আশপাশের লোকালয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। ডুয়ার্সের নাগরাকাটা, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, মাদারিহাট, ফালাকাটা থেকে তরাইয়ের নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন নকশালবাড়ি ছবিটা একই।

    যে এলাকাগুলো হড়পা বানে ভেসেছে সন্ধ্যা নামতে সেখানেই কোথাও একটি। আবার কোথাও দশ-বারোটি হাতি ছানাপানা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে বড় দল হলে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। খুবই সংযতভাবে খাবার খেয়ে জঙ্গলে ফিরে যাচ্ছে। বিপদ ডেকেছে দলছুট বখাটে হাতি। যেখানে চালের গন্ধ পাচ্ছে সেখানেই হামলা চালাচ্ছে। এমনিতেই হড়পা বানে বিধ্বস্ত এলাকা। তার উপর বুনো হাতির আতঙ্কে বানভাসি পরিবারগুলোর ঘুম ছুটেছে। নিরুপায় হয়ে ত্রাণ সামগ্রী বাচাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের টন্ডু ও বামনডাঙা চা-বাগান সংলগ্ন এলাকা, ধূপগুড়ির গধেয়াকুঠি, ময়নাগুড়ির আমগুড়ি, রামশাই এবং শিলিগুড়ির নকশালবাড়ির বেঙাইজোত, ডাঙুজোত এলাকায় প্রতি রাতে হাতি ঢুকছে। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ বলেন, ‘‘বনদপ্তরের সঙ্গে কথা হয়েছে। এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)