স্টাফ রিপোর্টার: দুর্নীতির ভুয়া অভিযোগে তৃণমূল নেতৃত্বকে ফাঁসাতে সিবিআই কীভাবে ছক কষছে সেই বিস্ফোরক তথ্যপ্রমাণ সামনে আনল একটি অডিও কল।
অডিওতে উঠে এসেছে তৃণমূল নেতাদের যে করে হোক দুর্নীতিতে ফাঁসাতেই হবে, ‘ফর্জি কেস’ বা ভুয়ো মামলা বানিয়ে ওই তৃণমূল নেতার নাম রাখতেই হবে চার্জশিটে। বারবার নোটিস পাঠাতে হবে। অডিওতে সিবিআইয়ের যে অফিসারের গলা শোনা গিয়েছে, তাঁকে রঞ্জিত কুমার বলে জানানো হয়েছে, যিনি এই মুহূর্তে সিবিআইয়ের দিল্লি হেড-কোয়ার্টারে ডিএসপি পদে রয়েছেন।
অডিও থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এই রঞ্জিত কুমারই নারদা মামলায় প্রথম তদন্তকারী অফিসার হিসাবে এক সময় কলকাতায় ছিলেন। সেই সময়ের ঘটনার প্রেক্ষিত তুলে এনে রঞ্জিত কুমার বলেছেন, তৃণমূল নেতাদের ফাঁসাতে তাঁর উপর বারবার চাপ আসত। ঘুরপথে সেই চাপ তৈরির নির্দেশ আসত বিজেপি শিবির থেকে। এই তথ্যপ্রমাণ সামনে রেখে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল নেতাদের ফাঁসাতে একই ধরনের চক্রান্তের আশঙ্কা করছে রাজ্যের শাসকদল।
যে অডিও কল ফাঁস হয়েছে, তা ইতিমধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল। নারদা-কাণ্ডে তৃণমূলের যে সব নেতার নাম সামনে এসেছিল, তাঁদের সঙ্গেই নাম এসেছিল বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বর্তমানে বিজেপির বিধায়ক মুকুল রায়ের। সেই অডিওয় শোনা যাচ্ছে, রঞ্জিত কুমার বলছেন, বারবার তৃণমূল নেতাদের নামে ভুয়া মামলা বানাতে বলা হত উপর থেকে, সব থেকে বেশি চাপ আসত তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তার করার। কিন্তু শুভেন্দু-মুকুল বিজেপিতে যোগ দিতেই চিত্র বদলে যায়। রঞ্জিতই বলছেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী আর মুকুল রায়রা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানানো হয়, তাঁদের আর বিরক্ত না করতে!’
অর্থাৎ এতদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেস যে যে অভিযোগ সামনে আনছিল, তার যে সবই সত্যি, সেটা প্রমাণ করতে এই অডিও-ই যথেষ্ট। যদিও সংবাদ প্রতিদিন সেই অডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি। তৃণমূলের বক্তব্য, একইভাবে সেই চক্রান্ত বারবার হয়েছে। আবারও তা চলছে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে নতুন করে দলের নেতাদের ফাঁসাতে।
নারদায় যে ফুটেজ সামনে এসেছিল, তা সবই ম্যাথু স্যামুয়েলের করা ভিডিও-র ভিত্তিতে। ওই সিবিআই অফিসার বলছেন, ‘জানা যায়, সবটাই ভুয়ো। যে ফোনে ভিডিও করা হয়েছিল, সেই ফোনটি না কি, সেই একই সময় সার্ভিস সেন্টারে ছিল। তা হলে ওই ফোনেই ভিডিও রেকর্ড হয় কী করে? আদালতে সেই ভুয়ো তথ্যপ্রমাণই পেশ করা হয়েছিল।’ এই সব কিছু একেবারে লিখিত আকারে জমা দিয়েছিলেন রঞ্জিত।
কিন্তু তার পরেও তাঁর উপর চাপ দেওয়া হয়েছে ভুয়ো মামলায় বানিয়ে তৃণমূল নেতাদের নামে চার্জশিট বানানোর। সে সব কথা না শোনার জন্যই তাঁকে শেষে দিল্লিতে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘গ্রেপ্তার করে মামলা শুরু করে দিতে এই ধরনের প্রমাণেই কাজ হয়। কিন্তু যার ভিত্তিতে গ্রেপ্তার, সেই তথ্যপ্রমাণই যখন ভুয়ো, সে সব তথ্য আদালতে পর্যন্ত দেওয়া, সেখানে তো কোনও মামলাই ধোপে টেকে না।’
এইভাবে চাপের মুখে কাজ করতে না পেরে বিরক্ত হয়ে রঞ্জিতও চাইছিলেন এই মামলা ছেড়ে একেবারে কলকাতা ছেড়ে দেওয়ার। শেষে উপর থেকেই ট্রান্সফার অর্ডার আসায় তিনি দিল্লি চলে যান। সূত্রের খবর, এই একই পদ্ধতিতে বিজেপি শিবিরের নির্দেশে আবারও সেই চক্রান্ত শুরু করেছে সিবিআইয়ের অফিসারদের একাংশ।