মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার এক বছর পরে বহু প্রতীক্ষিত গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণে পথে আরও এক ধাপ এগোল রাজ্য। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ, নভেম্বরের শুরুতেই কাজের বরাত পেতে চলেছে লারসেন অ্যান্ড টুব্রো লিমিটেড।
সাগরদ্বীপকে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে মুড়িগঙ্গা নদী। তাই যোগাযোগ রক্ষার অন্যতম মাধ্যম ভেসেল পরিষেবা। কিন্তু ভাটার সময়ে জলস্তর কমলেই বন্ধ হয়ে যায় ভেসেল চলাচল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা ছাড়া উপায় থাকে না যাত্রীদের। ভোগান্তিতে পড়েন মহিলা, শিশু, রোগী-সহ যাত্রীরা। এই মুড়িগঙ্গার উপরে সেতু নির্মাণ হলে উপকৃত হবেন বহু মানুষ।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মুড়িগঙ্গা নদীর উপরে তৈরি হতে চলেছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের গঙ্গাসাগর সেতু। এক দিকে কাকদ্বীপ, অন্য দিকে কচুবেড়িয়াকে যুক্ত করবে সেতুটি। দুই দিকেই থাকবে ফুটপাত। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী চার বছরের মধ্যে সেতু নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেতুর নকশা প্রকাশিত হয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে সার্ভে, টেন্ডার ও ডিপিআর সংক্রান্ত কাজ।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ করেছে। কাকদ্বীপে ৭.৯৫ একর এবং কচুবেড়িয়ায় ৫.০১ একর— মোট প্রায় ১২.৯৭ একর জমি কিনতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ১৫০ জনেরও বেশি জমিদাতার কাছ থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ সংগ্রহ করা হয়েছে। অনেকে ক্ষতিপূরণের চেকও পেয়ে গিয়েছেন।
সেতু নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১,৪৩৮ কোটি টাকা। কাজ শেষ হলে টানা দশ বছর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও থাকবে নির্মাণকারী সংস্থার উপরে। পরিবেশগত ছাড়পত্র ও কেন্দ্রীয় অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ হলেই শুরু হবে মূল নির্মাণকাজ।
সেতুর কাঠামো হবে খানিকটা দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা নিবেদিতা সেতুর মতো। নদীর তলদেশ জলস্তর থেকে প্রায় অনেক গভীর পর্যন্ত পাইলিং করতে হবে, যা প্রকৌশলগত ভাবে ‘চ্যালেঞ্জিং’ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষক শান্তনু গায়েন বলেন, “টেন্ডারের কাজ শেষ হওয়ায় আমরা আশাবাদী। বর্তমানে নদী পার হতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে। সেতু তৈরি হলে সেই সময় কমে দাঁড়াবে পাঁচ মিনিটে। দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হতে চলেছে।” এলাকার বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, “খুব তাড়াতাড়ি দ্বীপবাসীর স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্য নিজস্ব উদ্যোগেই সেতু তৈরি করছে। বিরোধীরা অনেক কথা বললেও, আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূরণ করছি। সেতু হলে পর্যটন ও বাণিজ্যে নতুন জোয়ার আসবে। মেলা পরিচালনা সহজ হবে।” পর্যটন ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলবে বলে আশা প্রশাসনের।