কয়েকশো বছর ধরে হরগৌরীর মূর্তি বিসর্জনকে কেন্দ্র করে উদ্যাপিত হয় ‘ভেলা ভাসান’। এই অনুষ্ঠান ঘিরে উৎসাহ চরমে থাকে বুদবুদের কোটা গ্রামে। শুধু এই গ্রাম নয়, আশপাশের কাঁকসা ব্লক থেকেও বহু মানুষ ভেলা ভাসান দেখতে কোটা গ্রামে হাজির হয়েছিলেন বৃহস্পতিবার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষ, বর্ধমানের তৃণমূল যুব সভাপতি রাসবিহারী হালদার-সহ অনেকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভেলা ভাসান কে প্রথম শুরু করেছিলেন, তা জানা যায়নি। তবে শোনা যায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে গ্রামেরই এক হরগৌরীর মূর্তির প্রথম এ ভাবে বিসর্জন হয়েছিল। সেই থেকে এটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অশোক গুঁই জানান, কোটা গ্রামে কালীপুজোর অমাবস্যায় হরগৌরীর পুজো বেশি হয়। বিসর্জন হয় ভাইফোঁটার দিন বিকেলে। গ্রামের সায়ের নামক একটি পুকুরে সমস্ত হরগৌরীর মূর্তি আনা হয়। তার পরে ভেলায় চাপিয়ে পুকুরে মূর্তিগুলি ঘোরানো হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত এই উৎসব চলে। আগে মাটির হাঁড়ি ভেলায় রেখে তার উপরে মূর্তি বসিয়ে ভেলা ভাসানো হত। এখন হয় স্টিলের হাঁড়িতে। চৌকো ভেলায় মোট ১৪০টি হাঁড়ি থাকে। দশটি করে হাঁড়ির লাইন থাকে প্রত্যেক ভেলায়। তার উপরে প্রতিমা বসানো হয়। পাঁচ জন বাদ্যকার ও পুজো উদ্যাক্তাদের কয়েক জন ভেলায় চাপেন। তার পরে ভাসান শুরু হয়। পুকুরের পাড়ে পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঢাকের প্রতিযোগিতা হয়।
এক বাসিন্দা সূরযকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য। প্রত্যেক বছর ভেলা ভাসান দেখতেবহু দূর থেকে মানুষজন এখানেআসেন। বিসর্জনের পরে আতশবাজি প্রদর্শনী হয়। ভেলা ভাসানকে কেন্দ্র করে একটি গ্রামীণ মেলা চলে চার দিন ধরে।’’ ভেলা ভাসান মেলা কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, চার দিনেরমেলায় কবিগান, যাত্রাপালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পানাগড় থেকে আসা কুন্তল মুখোপাধ্যায়, সুলক্ষণা সামন্তরা বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে আসছি। অনুষ্ঠান দেখে খুব ভাল লাগে।’’