• শহরের ‘ক্ষত’ সারাতে ইঙ্গিত মাথা বদলের
    আনন্দবাজার | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • পুর-এলাকা বা শহরাঞ্চলই যে দলের ‘মাথাব্যথা’, একাধিক সিদ্ধান্তে তৃণমূল তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের ছ’টি পুর-শহরের মধ্যে চারটিতেই সভাপতি বদল করেছে তৃণমূল। এ বার লোকসভা ভোটের ফল ও উন্নয়নের পরিসংখ্যানের নিরিখে তিন পুরপ্রধানের বদল নিয়ে দলের শীর্ষস্তরে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। জেলায় একটি পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পুর-প্রতিনিধিদের ক্ষোভ চরমে। তাঁকে বদল করা নিয়ে একপ্রস্ত আলোচনা হয়েছে। শুধু পুরপ্রধান নয়, লোকসভা ভোটে তৃণমূল যে সব বুথে ১০০টিরও বেশি ভোটে হেরেছিল, সেই সব বুথেও সভাপতি বদলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার দিকে এগোচ্ছে দল। ইতিমধ্যে, দলীয় বৈঠকে অঞ্চল সভাপতিদের নাম ও ব্লক কমিটির নাম চেয়ে পাঠিয়েছেন জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।

    তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, যে সব বুথে দল ১০০ ভোটের বেশি পিছিয়ে রয়েছে, এবং যে সব অঞ্চলে দলের হার অনেক বেশি ভোটে হয়েছে, সে সব জায়গায় সভাপতি বদলের সিদ্ধান্ত শীর্ষ নেতৃত্ব অনেক আগেই নিয়েছিলেন। এ বার তা কার্যকর করার পথে এগোচ্ছে তৃণমূল। দলীয় সূত্রে জানা যায়, দলের পরামর্শদাতা সংস্থা ইতিমধ্যে প্রতিটি বিধানসভা ধরে কোন কোন বুথে দল একশোর বেশি ভোটে হেরেছে, তার তালিকা বিধায়ক ও দলীয় নেতৃত্বের হাতে তুলে দিয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে একশোর বেশি ভোটে হার ছিল ১৩৩৭টি বুথে। ২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল জেলার ১৬টি আসনেই জিতেছিল। কিন্তু ১২৭০টি বুথে একশোও বেশি ভোটে দল পিছিয়ে ছিল। ২০২৪-র লোকসভা ভোটে অনেক বুথ পুনুরুদ্ধার অথবা পিছিয়ে থাকার ব্যবধান কমাতে পেরেছে। তার পরেও ১০১৫টি বুথে একশোর বেশি ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল।

    ওই তথ্য অনুযায়ী, বর্ধমান দক্ষিণে একশোর বেশি ভোটের হার বিধানসভার (২৩) চেয়ে লোকসভায় (৮৭) বেড়েছে । বেড়েছে ভাতার, কালনাতেও। পূর্বস্থলী উত্তরে ২০১৯ থেকে ক্রমাগত একশোর বেশি ভোটে ব্যবধানে হারের বুথের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৪ সালে এই সংখ্যা যথাক্রমে ১০৯, ১১২, ১২৬। লোকসভার তুলনায় বিধানসভায় হারা বুথের সংখ্যা কমেছে–বর্ধমান উত্তর, খণ্ডঘোষ, রায়না, জামালপুর, মন্তেশ্বর, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোটে। ব্যবধান প্রায় একই রয়েছে আউশগ্রাম, গলসি, মেমারি, পূর্বস্থলী দক্ষিণ, কাটোয়া। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শ, ওই সব জায়গায় বুথ সভাপতিকে বদল করতে হবে। নভেম্বরের মধ্যেই সেই কাজ শেষ করতে চাইছেন জেলা নেতৃত্ব।

    এ দিকে, পুরপ্রধানদের রদলবদলের কাজও নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। শহরাঞ্চলের ‘ক্ষত’ মেরামতের জন্য সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ‘দক্ষতা ও কর্মক্ষমতাকে’ বিচার করে পূর্ব বর্ধমানের কালনা, দাঁইহাট ও গুসকরা পুরপ্রধানকে বদলের দিকে ঝুঁকেছে দল। ওই সব পুরপ্রধানকে দলের সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্ত পুরপ্রধান কে হবেন, পরামর্শদাতা সংস্থা তা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জমাও দিয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে শহুরে ভোটে বড় ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল। তার ভিত্তিতেই এ বার পুরসভা পরিচালনায় নতুন মুখ আনতে চলেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার একটি পুর-এলাকায় লোকসভায় দল ভাল ফল করলেও পুরপ্রধানের ‘দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা’ নিয়ে পুর-প্রতিনিধিদের ক্ষোভ রয়েছে। পুজোর আগে পরামর্শদাতা সংস্থাকে সে কথা জানিয়েছেন পুর-প্রতিনিধিরা। বিধায়কের সঙ্গেও সম্পর্কে টানাপোড়েন রয়েছে। ওই পুরসভা নিয়েও চর্চা রয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)