কালীপুজোর দিন বিকাল থেকে রাত ১০টার মধ্যে প্রতাপনগর বিন্দনাথপুর, দোলগোবিন্দপুর এবং অরবিন্দপল্লি থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি করে চন্দ্রবোড়া, কালাচ ও গোখরো সাপ। বুধবার আবার পোড়াঘাট সীতানাথ চৌধুরী লেন, রানির চড়া থেকে দু’টি চন্দ্রবোড়া সাপ ধরা পড়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতি দিন এ ভাবেই নবদ্বীপ শহরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ মিলছে বড় বড় চন্দ্রবোড়া সাপের। তালিকায় তার পরেই আছে গোখরো এবং কালাচ। এভাবে সাপের বাড়বাড়ন্ত আগে নবদ্বীপে দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন আতঙ্কিত বাসিন্দারা।
সম্প্রতি প্রতাপনগরে প্রতিবেশীর বাড়িতে বিষধর চন্দ্রবোড়া ধরতে গিয়ে মৃত্যু হয় স্থানীয় যুবক দীপ বালার। সাপ ধরে প্লাস্টিকের কৌটোর মধ্যে ঢোকানোর সময় সেটি তাঁকে ছোবল দেয়। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল হয়ে নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। বুধবার রাতে মৃত্যু হয় বছর বাইশের ওই যুবকের।
নবদ্বীপের প্রতাপনগরে ঘটনাটি ঘটে গত রবিবার। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতি দিনই নবদ্বীপ শহরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ মিলছে বড় বড় চন্দ্রবোড়া সাপের। যা আগে কখনও দেখা যায়নি বলেই শহরবাসীর অভিমত। বিষয়টি ক্রমশ আতঙ্কের সৃষ্টি করছে লোকের মনে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান চারটি বিষধর সাপের অন্যতম হল চন্দ্রবোড়া বা ‘রাসেলস ভাইপার।’ চন্দ্রবোড়া সাধারণত ঝোপঝাড়, জঙ্গল, ফসলের খেতে বাস করে। শুকনো ডাঙায় থাকতে পছন্দ করে। প্রধান খাদ্য ইঁদুর। এ ছাড়া ব্যাঙ, টিকটিকি, ছোট পাখি খায়। খাবার পাওয়া যায় বলে চন্দ্রবোড়া বসতি বাড়ির চারপাশেও ডেরা বাঁধে।
সাপ ধরতে অত্যন্ত দক্ষ এবং অভিজ্ঞ মহাদেব সাহা লোকালয়ে ঘন ঘন সাপের খোঁজ পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, “শুধু সাপ নয়, সমস্ত প্রাণীর স্বাভাবিক বাসস্থান মানুষ দখল করে নিচ্ছে। তাই ওরাও পাল্টা আমাদের ঘরে চলে আসছে। শুধু চন্দ্রবোড়া কেন হাতি, কুমির, বাঘ সবই তো লোকালয়ে চলে আসছে।”
নবদ্বীপ শহরে এই মুহূর্তে বন দফতর বাদে সাপ ধরার প্রধান লোক পেশায় পুরকর্মী মহাদেব। সাপ ধরার যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে তিনি ছুটে বেড়ান। কোনও টাকাপয়সা নেন না। তিনি বলেন, “১৯৯৯ সাল থেকে সাপ ধরা আমার নেশা। কিন্তু কিছু দিন যাবৎ এই এলাকায় এত সাপের খোঁজ মিলছে, যা আগে দেখিনি। প্রধানত চন্দ্রবোড়া এবং তার পরেই গোখরো সাপের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে আমাদের এই অঞ্চলে।”
গত শুক্রবার প্রাচীন মায়াপুর এবং সরকার পাড়ার দু’টি বাড়ি থেকে সাপ ধরেছেন মহাদেব। শনিবার দুপুরে বুড়োশিবতলা থেকে ফের একটি চন্দ্রবোড়া উদ্ধার করে বন দফতর। ওই দফতরের কর্মী তেঁতুল ঘোষ বলেন, “এই মাসে এমন কোনও দিন নেই যে দিন চন্দ্রবোড়া উদ্ধার হয়নি। আসলে অতি বর্ষার কারণে বহু চন্দ্রবোড়া গাছে ছিল। শীতের মুখে তারা নেমে আসছে, খাদ্য এবং আগামী মাস তিনেকের নিরাপদ বাসস্থানের সন্ধানে।”
সাপ বিষয়ে অভিজ্ঞ দেবাশিস সেন বলেন, “চন্দ্রবোড়া জল বা জলা জায়গায় কোনও ভাবেই থাকে না। কেননা চন্দ্রবোড়ার চামড়ায় জলে ক্ষত সৃষ্টি হয় যা থেকে পচন ধরে সাপ মারা যায়। এ বার অতিবৃষ্টি এবং বন্যার ফলে চন্দ্রবোড়া এখন বাস্তুচ্যুত। স্বাভাবিক ভাবেই সে শুকনো ডাঙার খোঁজ করছে এবং মানুষের বাড়ির বিভিন্ন কোণ, অন্ধকার গুদামঘর, স্কুল বাড়ির তুলনায় যাতায়াত কম এমন জায়গায় আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে।”
চন্দ্রবোড়া একসঙ্গে ৪০-৭০টা পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। তাদের বড় অংশই বেঁচে যায়। পাশাপাশি, গোসাপ ও শাঁখামুঠি সাপ যা চন্দ্রবোড়া-জাতীয় অন্যান্য সাপ খেত তারা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া সাপের সংখ্যা বৃদ্ধির একটি কারণ। বন দফতরের কৃষ্ণনগর ডিভিশনের রেঞ্জার দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “এই সময়ে চন্দ্রবোড়া দেখা যাওয়া স্বাভাবিক। আমাদের কাছে খবর এলেই আমরা সেগুলি উদ্ধার করার ব্যবস্থা করছি।”