রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া ঘোষণার দিন যত কাছে আসছে, বিতর্ক তত ঘনীভূত হচ্ছে। বৈধ কোনও ভোটারের নাম বাদ গেলে লক্ষ লোক নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের হুঙ্কার আগেই দিয়ে রেখেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিহারের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এ বার এসআইআর বিরোধিতায় ময়দানে নামছে ‘অ-রাজনৈতিক’ নানা সংগঠনও। ‘অন্যায় ভাবে’ কারও নাম কেটে দেওয়া হলে নন্দীগ্রামের মতোই তাঁরা প্রতিবাদ-প্রতিরোধের আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রী ও জমিয়তে উলামা-র রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। বিজেপি অবশ্য পাল্টা বলছে, কমিশনের সাংবিধানিক কাজে বাধা দেওয়া হলে সংবিধান মোতাবেকই ব্যবস্থা হবে।
বঙ্গে এসআইআর-এর প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ উর্দু অ্যাকাডেমিতে কাল, শনিবার রাজ্য জমিয়তের নবগঠিত ওয়ার্কিং কমিটির অধিবেশন ডাকা হয়েছে। সূত্রের খবর, বিহারে হয়ে যাওয়া এসআইআর-এর পর্যালোচনা করে তিন পাতার একটি রিপোর্ট ওই বৈঠকে পেশ করা হবে। এসআইএর-এর নেপথ্যে কেন্দ্রীয় সরকার তথা নির্বাচন কমিশনের ‘প্রকৃত উদ্দেশ্যে’র কথা জানিয়ে জেলায় জেলায় সভার কর্মসূচি সেখানে ঠিক করা হবে। নানা জায়গায় জমিয়তের তরফে খোলা হবে শিবিরও। তার খুঁটিনাটি ওই বৈঠকেই চূড়ান্ত হওয়ার কথা। সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুল্লার মতে, ‘‘ভোটার তালিকার নাম করে নাগরিকত্ব যাচাই করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়। এটা সংবিধান সম্মত নয়। আমাদের পরিষ্কার দাবি, পুরুষানুক্রমিক ভাবে যাঁরা এ রাজ্যে বসবাস করছেন, তাঁদের নথির কারণ দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। তার জন্য প্রয়োজনে এলাকার স্থানীয় মানুষ বা প্রতিবেশীদের বক্তব্য গ্রাহ্য করতে হবে।’’
সিদ্দিকু্ল্লাদের দাবি, বিহারে এসআইআর করে যে ৪৭ লক্ষের বেশি মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেক প্রান্তিক, গরিব মানুষ এবং পরিযায়ী শ্রমিক আছেন। কাদের নাম কেন বাদ দেওয়া হল, তার বিশদ ব্যাখ্যা কমিশন দেয়নি। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি তাঁরা বাংলায় হতে দেবেন না। সূত্রের খবর, এসআইআর-আন্দোলনের বিষয়ে তৃণমূলের সঙ্গে জমিয়তের কোনও আলোচনা হয়নি। এই প্রশ্নে সিদ্দিকুল্লার বক্তব্য, ‘‘জমিয়তে রাজনৈতিক সংগঠন নয়। রাজনৈতিক দল তার কাজ করবে, আমরা সামাজিক সংগঠন হিসেবে মানুষের বিপদে পাশে থাকব। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে জমিয়তের যেমন ভূমিকা ছিল, এখনও তা-ই হবে। প্রয়োজন হলে এসআইআর নিয়েও প্রতিরোধ হবে!’’ শহরে শনিবারই এসআইআর বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে ১৬টি নাগরিক ও গণ-সংগঠনও।
এমতাবস্থায় বিজেপি পাল্টা সংবিধানের কথাই মনে করাচ্ছে। দলের একাধিক নেতা ইতিমধ্যে ডাক দিয়েছেন ‘নো এসআইআর, নো ইলেকশন’! বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এটা আমাদের নয়, নির্বাচন কমিশনেরই অবস্থান। নির্বাচন করার আগে ভোটার তালিকা সংস্কার সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। তৃণমূল বা অন্য কোনও সংগঠন যদি সেই প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে সংবিধানের রক্ষাকর্তারা নিশ্চয়ই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এসআইআর-কে রসদ করে বাঁচার চেষ্টা করলেও তৃণমূলের প্রতি মানুষের কোনও আশা নেই, ভালবাসাও নেই!’’