• ‘কমেডিয়ানের সচেতনতা আসরানিই এনেছিলেন হিন্দি ছবিতে’ অন্য আলোয় আসরানিকে নিয়ে আলোচনা বিশিষ্ট চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের
    আজকাল | ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • প্রয়াত হয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেতা আসরানি। ৮৪ বছর বয়সে, দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর, গত সোমবার (২০ অক্টোবর, ২০২৫) দুপুর ১টা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। নিজের দীর্ঘ ফিল্ম কেরিয়ারে অসংখ্য চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। আসরানি ছিলেন ভারতীয় সিনেমার অন্যতম প্রিয় মুখ। এক অনবদ্য কৌতুকাভিনেতা, যিনি ৫০ বছরেরও বেশি সময়ে ৩৫০টিরও বেশি ছবিতে হাসির রঙ ছড়িয়েছেন। পুনের এফটিআইআই -এর প্রাক্তন ছাত্র আসরানি ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি বলিউডে পা রাখেন। শুরুতে গুরুগম্ভীর চরিত্রে অভিনয় করলেও খুব তাড়াতাড়িই তাঁর অনবদ্য হাস্যরস ও কমিক টাইমিং তাঁকে বানিয়ে তোলে দর্শকদের প্রিয় মুখ। বিশেষত সাত ও আটের দশকে, তিনি ছিলেন প্রতিটি পরিবারের হাসির কারণ। একেক সময় গোঁড়া কেরানি, কখনও বা দিশেহারা সহকারী আবার কখনও সরল, বিভ্রান্ত প্রেমিকের চরিত্রে অবিস্মরণীয়। আজও তাঁর প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি হাসি বলিউডের এক সোনালি যুগের স্মৃতি হয়ে বেঁচে আছে তাই তো সিনেমা রসিকদের কথায়, “আসরানির প্রাণবন্ত অভিব্যক্তি আর নিখুঁত টাইমিং যেন হয়ে উঠেছিল ভারতের হাস্যরস অভিনয়ের পাঠ্যবই।”

    যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজের বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ও বিশিষ্ট চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। অধ্যাপনার পাশাপাশি বহু বছর ধরে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে দেশে-বিদেশের নানান গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায়। আলোচিত বিষয়ে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের ধারণা, মতামত তাঁর ব্যক্তিত্বের মতোই ধারালো, সোজাসাপটা।

    সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “কৌতুকাভিনেতা বলতে যা বোঝায়, আসরানিকে ছবিতে সেভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আসরানি তার মধ্যেই সংস্কৃতির উদ্ধৃতিচিহ্ন! যেহেতু তিনি ফিল্ম ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং ঋত্বিক ঘটকের ছাত্র ছিলেন এবং যেহেতু তিনি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের আবহাওয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ফলত তাঁর অভিনীত বিভিন্ন ছবিতে আন্তর্জাতিক কমেডির, বিশেষত মার্কিন কমেডির বিভিন্ন রেফারেন্স তিনি উদ্ধৃতিচিহ্নের মতো ব্যবহার করেছেন। আসলে, একজন কমেডিয়ানের সচেতনতা তাঁর হাত ধরেই, মধ্য ষাট থেকে হিন্দি ছবিতে প্রবেশ করে। আসরানিকে বাণিজ্যিক ছবিতে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হলেও তিনি তার মধ্যেও নিজের স্বাক্ষর বা সই রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ‘শোলে’ ছবিতে তিনি যখন বলেন, ‘হাম আংরেজো কা জমানা কে জেলার থে’, তখন তাঁর চোখে যে তাচ্ছিল্যর অভিব্যক্তি ধরা পড়ে, তা আসলে ভারতীয় কারাব্যবস্থার প্রতি একটি রাজনৈতিক মন্তব্য। আসরানির, উৎপল দত্তর মতোই অভিনয়ের ‘অতরিজম’ ছিল। এককথায় কমেডিয়ানের সচেতনতা আসরানিই এনেছিলেন হিন্দি ছবিতে’, বললেন এই বিশিষ্ট চলচ্চিত্র-তাত্ত্বিক।
  • Link to this news (আজকাল)