‘রায় পক্ষেই’, রক্ষাকবচ খুইয়েও দাবি শুভেন্দুর, কুণালের প্রশ্ন, ‘তাহলে আগে কেন আনন্দ করছিল?’
প্রতিদিন | ২৫ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কলকাতা হাই কোর্ট আইনি রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তিনি বিপাকে পড়তে চলেছেন বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। কিন্তু আদালতের রায়ে নিজের ‘জয়’ দেখছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিন বছর আগে আদালতেরই জারি করা অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচ শুক্রবার প্রত্যাহার করে হাই কোর্ট। একইসঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলায় রাজ্য সরকার ও সিবিআইকে নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল ‘সিট’ গড়ে তদন্ত শুরুরও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। কিন্তু স্বয়ং বিরোধী দলনেতার পালটা দাবি, “মামলার রায় আমারই পক্ষে গিয়েছে।”
শুক্রবার হাওড়ার একটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যতগুলো মিথ্যে মামলা দিয়েছিল এই জেহাদি সরকার, সব স্থগিত করে দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি, খুন, হামলা থেকে শুরু করে যা যা মিথ্যে মামলা সাজিয়েছিল, সেগুলোও খারিজ করেছে। এই রায় আমার কাছে কোনও নেগেটিভ রায় নয়।” যদিও শুভেন্দুর এমন দাবি উড়িয়ে পালটা প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি জানতে চান, ‘‘তা হলে আগে রক্ষাকবচ পাওয়ার সময় কেন আনন্দ করছিল? এখন তো তবু এফআইআর করা যাবে, পুলিশ মামলার তদন্ত করতে পারবে।’’ শুভেন্দুর রক্ষাকবচ প্রত্যাহার নিয়ে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও দাবি, ‘‘কেন এই রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিল, সেটাই আগে দেখা দরকার।’’
বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণার মাস কয়েক আগেই কলকাতা হাই কোর্টের রায় নিঃসন্দেহে একটা বড় ধাক্কা শুভেন্দুর কাছে। ২০২২ সাল থেকে হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশে এই রক্ষাকবচ বহাল ছিল। মান্থার নির্দেশ ছিল, আদালতের আগাম অনুমতি ছাড়া শুভেন্দুর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর দায়ের করা যাবে না। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা ১৫টি এফআইআরের উপর স্থগিতাদেশও দেন বিচারপতি মান্থা। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্যের আবেদনের মামলার এতদিন শুনানি চলছিল।
বিচারপতি সেনগুপ্তর রায়ের পর এদিন আইনজীবী ও সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘শুভেন্দুর রক্ষাকবচ উঠে যেতেই এখন তদন্তের রাস্তা খুলে গেল। এবার ওঁর মস্তানিটা বন্ধ হবে। শুভেন্দু কেন, ওর ক্লোজ সার্কেলে যারা আছে, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হবে। তদন্ত শুরু হলে চাকরি চুরিতে কত টাকা তুলেছিল শুভেন্দু ? সব বেরিয়ে আসবে।” সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি মান্থার আগের রায়কে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে কটাক্ষ করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। এরপরই শুভেন্দুকে হাই কোর্টের ধাক্কা নিয়ে কটাক্ষ করে বিজ্ঞাপনী স্লোগান আউড়ে কুণালের মন্তব্য, ‘‘জোরকা ঝটকা, ধীরেসে লাগে…।’’ তৃণমূলের মুখপাত্রের দাবি, এই রক্ষাকবচের বলে বলীয়ান হয়ে রাজ্যজুড়ে যথেষ্ট কুৎসা ও প্ররোচনা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যায়নি। এবার সেই রক্ষাকবচ খারিজ করল হাইকোর্ট। কুণাল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ও শাসকদল এই নিয়ে এতদিন যে বক্তব্য রেখেছে, এই রায় তাকেই মান্যতা দিল হাই কোর্ট। এবার কিন্তু বাংলায় কুৎসা ও প্ররোচনা ছড়ানোর আগে বিরোধী দলনেতাকে ভাবতে হবে।’’
মামলার শুনানি শেষে রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সেনগুপ্ত মন্তব্য করেন, অনির্দিষ্টকাল ধরে এমন রক্ষাকবচ বহাল থাকতে পারে না। এর জেরে এবার থেকে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আর এফআইআর দায়ের করা বা নতুন মামলায় পুলিশি তদন্তে কোনও বাধা থাকল না। তবে, একদিকে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৫টি মামলা আদালত খারিজ করলেও মানিকতলা থানা-সহ পাঁচটি মামলায় এদিন হাই কোর্ট সিবিআই ও রাজ্যের তত্বাবধানে বিশেষ তদন্তকারী টিম গড়ে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। বিচারপতি জানিয়েছেন, এসপি পদমর্যাদার আধিকারিক থাকবে সিবিআই ও রাজ্য থেকে। এই ‘সিট’-এর সর্বোচ্চ সদস্য হবেন ১২ জন। সেখানে ৬ জন সিবিআই আধিকারিক ও ৬ জন রাজ্য পুলিশের আধিকারিক থাকবেন। এদিকে, শুভেন্দু এখনও নন্দীগ্রাম থানার ২ টি মামলা, তমলুক থানার ১ টি মামলা, কাঁথি থানার ১ টি মামলায় রক্ষাকবচ চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেননি। আদালত জানিয়েছে, সেই মামলাগুলিতে রক্ষাকবচ চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা বিবেচনায় আনবে। তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া ২৬ টি এফআইআরের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু।
গত বছর ৮ ডিসেম্বর মামলার শুনানিতে আদালতের কাছে আবেদন ছিল, ‘‘হয় এফআইআরগুলি খারিজ করে দেওয়া হোক, নয়তো অভিযোগের তদন্ত করুক সিবিআই।’’ সেই মামলাতেই শুভেন্দুকে রক্ষাকবচ দিয়েছিলেন বিচারপতি মান্থা। বিচারপতি এও বলেন, এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা বা তাঁর আইনজীবীদের কিছু বলার থাকলে আগামী সোমবারের মধ্যে আদালতে লিখিতভাবে তা জানাতে হবে।