• ভারতের ‘অ্যাডম্যান’ পীযূষ পান্ডে প্রয়াত
    বর্তমান | ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • নয়াদিল্লি: পোলিও টিকাকরণে ভারতের সাফল্য বিশ্বের কাছে আজ অনুপ্রেরণা। অমিতাভ বচ্চনের ব্যারিটোন কণ্ঠের জাদুতে দেশের কোণায় কোণায় পৌঁছে গিয়েছিল পোলিও টিকাকরণের প্রচার। তবে এই প্রচারাভিযানের নেপথ্যে ছিলেন আরও এক কিংবদন্তি। তাঁর কলমের জাদুতেই রূপ পেয়েছিল ওই বহুল শ্রুত বাক্যটি— ‘দো বুন্দ জিন্দেগি কি’। তিনি পীযূস পান্ডে। ভারতের বিজ্ঞাপন জগতের ‘অ্যাডম্যান’। শুক্রবার তিনি পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে। ৭০ বছর বয়সে। 

    ২৭ বছরে বয়সে যোগ দিয়েছিলেন বিজ্ঞাপন সংস্থা ওগিলভি ইন্ডিয়াতে। সেটা ১৯৮২ সাল। তখনও বিজ্ঞাপনে ইংরেজির প্রভাব জাঁকিয়ে বসে রয়েছে। তিনি এসে আমূল বদলালেন যাবতীয় ধারণা। বিজ্ঞাপনে আনলেন দেশের আপন স্বাদ। খাঁটি ভারতীয়ত্ব। তাঁর কেরিয়ারের শুরুর দিক থেকেই টেলিভিশনের রমরমা। প্রিন্ট মিডিয়াও চলছে তাল মিলিয়ে। বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রিতে একটা কথা ভীষণ প্রচলিত ছিল, ক্যাচলাইন হওয়া চাই আকর্ষণীয়। বিশ্বাস করতেন না পীযূষ। তাঁর মতে, কেবল ক্যাচলাইন দিয়ে বিজ্ঞাপন হবে না। তার জন্য চাই আইডিয়া। এমন আইডিয়া, যা মানুষের মনে গেঁথে যাবে। এই কাজটাই করলেন বিজ্ঞাপনে। এমন ভিজ্যুয়াল তৈরি করলেন, যেগুলি দেখা যায় চারপাশে। সমস্যাগুলিও চেনা। সেখান থেকে খুঁজে বের করা সমাধান। চটি ফেটে যাওয়া, ভিড় বাসে গাদাগাদি করে দুলতে দুলতে যাওয়া... বিজ্ঞাপনে উঠে এল গরিব মানুষের কথা। সহমর্মিতার সঙ্গে সুচারুভাবে মেশালেন বিজ্ঞাপন। আর ক্যাচলাইন? সেগুলির মাধ্যমেই চিরকাল স্মরণীয় থাকবেন পীযূষ। 

    ১৯৯৪ সাল। ক্যাডবেরি সমীক্ষায় দেখল, তাদের সংস্থাকে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘শিশুদের জন্য’ হিসেবে। তবে চকোলেট যে সকলের, তা প্রমাণের জন্য অ্যাড এজেন্সির দ্বারস্থ হল সংস্থাটি। তখন দীপাবলির ছুটিতে আমেরিকায় পীযূষ। বস ডেকে পাঠালেন তাঁকে। ফেরার পথে লিখে ফেললেন জিঙ্গলটি— ‘কুছ খাস হ্যায়’। এই বিজ্ঞাপনের ভিজ্যুয়ালের জন্য একজন নন ডান্সারকে চেয়েছিলেন তিনি। চকোলেটের স্বাদ নিয়ে ক্রিকেট ময়দানে শিমোনা রাশির নাচ রাতারাতি ভাইরাল হয়। কেবল ক্যাডবেরি নয়, ‘ফেভিকল কা জোড়’, এশিয়ান পেন্টসের ‘হার ঘর কুছ কেহেতা হ্যায়’-এর মতো আরও কত বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন যে তাঁর কলমের জাদুতে সফল হয়েছে, হিসেব নেই। 

    তাঁর কলমের ছাপ রয়েছে রাজনীতির মঞ্চেও। ২০১৪ সালে ‘আব কি বার, মোদি সরকার’ প্রচারাভিযানের সাফল্য আলাদা করে বলে দিতে হয় না। অথচ প্রথমে নাকি এই বিজ্ঞাপনটি করতেই চাননি। পরে অনেক ভাবনাচিন্তার পর রাজি হন। তার ফল? প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে নরেন্দ্র মোদি। ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’ গানের গীতিকারও পীযূষ। অভিনয় করেছেন ‘মাদ্রাস কাফে’ ছবিতে। ২০২৩ সালে ওগিলভি ইন্ডিয়ার চেয়ারপার্সন পদ থেকে ইস্তফা দেন জয়পুরের ছেলে পীযূষ। দীর্ঘদিন ভুগছিলেন ইনফেকশনে। আজ, শনিবার তাঁর শেষকৃত্য হওয়ার কথা। তাঁর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিতাভ বচ্চন, নির্মলা সীতারামন সহ আরও অনেকে। তিনি ছেড়ে গেলেও, ভারতের বিজ্ঞাপন জগতের সঙ্গে তাঁর নাড়ির যোগ ‘টুটেগা নেহি’।   
  • Link to this news (বর্তমান)