মুম্বই: রক্ষকই ভক্ষক! মহারাষ্ট্রে সরকারি হাসপাতালের এক মহিলা চিকিৎসকের আত্মহত্যার ঘটনায় শোরগোল তুঙ্গে। শুক্রবার পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাতে একটি হোটেলের ঘর থেকে ২৮ বছরের ওই চিকিৎসকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতার বাঁহাতের তালুতে মিলেছে সুইসাইড নোট। পেন দিয়ে নীল কালিতে লেখা সেই সুইসাইড নোটে তাঁর অভিযোগ, গোপাল বাদনে নামে পুলিশের এক সাব-ইনসপেক্টর পাঁচ মাসে চারবার ধর্ষণ করেছেন। অনবরত শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার শিকার হয়েই এই চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন। শুধু বাদনে নয়, সুইসাইড নোটে প্রশান্ত বাঁকের নামে আরও এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন প্রয়াত চিকিৎসক। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন এক সাংসদ ও তাঁর দুই সহযোগী। সুইসাইড নোট অনুযায়ী, মৃত মহিলা চিকিৎসকের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন ওই রাজনৈতিক নেতা। বিদ জেলার বাসিন্দা হলেও সাতারার ফলটন সাব-ডিস্ট্রিক্ট হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন মৃত মহিলা চিকিৎসক। এর আগে গত ১৯ জুন ডেপুটি পুলিশ সুপারকে লেখা একটি চিঠিতেও ফলটন গ্রামীণ পুলিশ ডিভিশনের একাধিক অফিসারের নামে অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি আত্মঘাতী হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নিন্দার ঝড় বইছে। ডাবল ইঞ্জিন মহারাষ্ট্র সরকার ও তার পুলিশ বাহিনীর মুণ্ডপাত করেছে বিরোধীরা। উপযুক্ত পদক্ষেপের দাবি তুলেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ সরকারের দুই শরিক এনসিপি ও শিবসেনাও।
চাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিশের নির্দেশে ধর্ষণে অভিযুক্ত অফিসার বাদনেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। মৃত চিকিৎসকের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। চলছে ফরেন্সিক পরীক্ষাও। তবে তাতে বিতর্ক থামছে না। কারণ, কয়েক মাস আগে পুলিশের শীর্ষস্তরে চিঠি লিখে ওই চিকিৎসক গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন। গত ১৯ জুন ডেপুটি পুলিশ সুপারকে লেখা সেই চিঠিতে ওই মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণে অভিযুক্ত এসআই বাদনে ছাড়াও সাব-ডিভিশনাল পুলিশ ইনসপেক্টর পাতিল এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ ইনসপেক্টর লড়পুত্রের নাম করেছিলেন। এই দুই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে প্রবল মানসিক চাপ তৈরির অভিযোগ করে উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের শীর্ষ স্তরে অভিযোগ জানিয়েও কাজের কাজ কিছু হয়নি। গতকাল রাতে তিনি আত্মঘাতী হওয়ার পর এদিন মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহাযুতি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বিজয় নামদেবরাও ওয়াড়েত্তিওয়ার। এক্স হ্যান্ডলে তাঁর তোপ, ‘রক্ষকই যখন শিকারী! পুলিশের দায়িত্ব নিরাপত্তা দেওয়া। সেই পুলিশই যদি একজন মহিলা চিকিৎসকের উপর নির্যাতন চালায় তাহলে বিচার মিলবে কীভাবে? মেয়েটি পূর্বেই অভিযোগ জানিয়েছিল। তা সত্ত্বেও কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না? তাঁর অভিযোগকে গুরুত্ব না দেওয়া আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। মহাযুতি সরকার বারবার পুলিশকে আড়াল করছে। এর ফলে পুলিশের অত্যাচার বেড়েই চলেছে। শুধুমাত্র তদন্তের নির্দেশে কাজ হবে না। সাসপেন্ড নয়, অভিযুক্ত অফিসারদের চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে। নাহলে তদন্তের প্রক্রিয়ায় তাঁরা প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেন।’