নয়াদিল্লি: টার্গেট ভারত! সক্রিয় আইএসআই। তাদেরই কলকাঠিতে সদ্য ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কুখ্যাত পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তোইবা। তারপর থেকে ভারতজুড়ে ক্রমশ জাল ছড়াচ্ছে আইএস মডিউল! লক্ষ্য একটাই, বড়মাপের নাশকতা। তাও আবার খাস দেশের রাজধানীতে! দীপাবলির আবহে দিল্লিতে আত্মঘাতী হামলার ছক কষেছিল আইএস। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেই প্ল্যান বানচাল করল দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল। রাজধানী এবং মধ্যপ্রদেশে পৃথক অপারেশন চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে দুই সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে। রাজধানীতে তাদের ডেরা থেকে মিলেছে প্লাস্টিক বোমা বা ‘আরডিএক্স বেসড সি-ফোর’, মলোটভ ককটেল, টাইমার, বিস্ফোরক তৈরির অন্যান্য সরঞ্জাম ও আইএসের পতাকা। ধৃত দুই সন্ত্রাসবাদী ‘ফিদায়েঁ’ হামলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল বলে খবর। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল অংশে হামলা চালানোর প্ল্যান ছিল তাদের।
আইএস যে দিল্লিতে বড়মাপের হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে, গোপন সূত্রে সেই খবর এসেছিল গোয়েন্দাদের হাতে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে নামে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল। দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশে তল্লাশি চালায় দু’টি পৃথক টিম। গত ১৬ অক্টোবর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রমোদ সিং খুশওয়া ও ললিত মোহনের নেতৃত্বে একটি টিম আচমকা হানা দেয় দক্ষিণ দিল্লির সাদিকনগরে। বাড়ির কাছে রাস্তা থেকে আটক করা হয় বছর উনিশের মহম্মদ আদনান খান ওরফে আবু মুহারিবকে (১৯)। ২০২৪ সালেও ইউএপিএ ধারায় মহম্মদ আদনানকে গ্রেফতার করেছিল উত্তরপ্রদেশ এটিএস। পরে জামিনে বেরিয়ে সে ফের জঙ্গি কার্যকলাপ শুরু করে। এবার অবশ্য জেরায় সে ভোপালে থাকা আর এক আদনানের কথা জানায়। সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রদেশে অ্যান্টি টেররিজম স্কোয়াডের (এটিএস) সহায়তায় সেখানে অভিযান চালায় দ্বিতীয় একটি টিম। গ্রেফতার করা হয় ২০ বছর বয়সি আদনান খান ওরফে আবু মহম্মদকে।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, শরীরে আইইডি বেঁধে দক্ষিণ দিল্লির শপিং মল বা জনবহুল পার্কে বিস্ফোরণ ঘটানোর ছক ছিল ধৃতদের। বিভিন্ন এলাকা রেকি করার পাশাপাশি জোরকদমে চলছিল আইইডি তৈরির কাজ। দু’জনকেই যাবতীয় নির্দেশ দিচ্ছিল সিরিয়ায় থাকা আইএস জঙ্গি আবু ইব্রাহিম আল-কুরেশি। ধৃত দুই জঙ্গিকে জেরা করে এদেশে আইএসের পুরো নেটওয়ার্ক এবং দিল্লিতে তাদের হামলার কী পরিকল্পনা ছিল, তা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে একাধিক তদন্তকারী সংস্থা। স্পেশাল সেলের এসিপি প্রমোদ সিং খুশওয়া এক বিবৃতিতে জানান, সাদিকনগরে মহম্মদ আদনানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে। সেগুলি থেকে আইএসের প্রচারপত্র ছাড়াও রিমোটের মাধ্যমে কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো যায়, কীভাবে প্লাস্টিক বোমা তৈরি করা যায়, সেই সংক্রান্ত বিভিন্ন ছবি ও তৈরির পদ্ধতি মিলেছে। ওই ডেরা থেকে মলোটভ ককটেলের পাশাপাশি একাধিক পেন ড্রাইভ, হার্ড ডিস্ক, আইএসের ফ্ল্যাগ, জঙ্গি হামলার বিশেষ পোশাক ও একটি টাইমার ঘড়ি উদ্ধার হয়েছে। বিদেশি হ্যান্ডলারদের নির্দেশ মেনে আইইডি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করছিল জঙ্গিরা।
জেরায় জানা যায়, তথ্য-প্রযুক্তিতে ডিপ্লোমা করার পর ধীরে ধীরে আইএসের সংস্পর্শে আসে দিল্লির মহম্মদ আদনান। অন্যদিকে, ক্লাস টুয়েলভ পাসের পর চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভোপালের আদনান খান। সেও অনলাইনে জেহাদি প্রচারে আকৃষ্ট হয়েছিল। তারপর এনক্রিপ্টেড সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের মাধ্যমেই আইএসের বিদেশি হ্যান্ডলারদের সংস্পর্শে আসে।