পুলিশ চার্জশিট জমা দেওয়ার পরও শুনানি হচ্ছে না, গাংনাপুরের খুনের মামলা ঝুলে
বর্তমান | ২৫ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব সংবাদদাতা, রানাঘাট: স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িত রয়েছে, সেই সন্দেহে নিয়মিত অশান্তি লেগেই থাকত। এরই মাঝে হঠাৎ রহস্যমৃত্যু হয় স্বামীর। তারপর বউমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত খুনের অভিযোগ তোলে মৃতের পরিবার। কিন্তু, সরকারি আইনজীবী নিয়োগ না হওয়ার কারণে সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। চার মাস আগে পুলিশ আদালতে চার্জশিটও জমা দিয়েছে। তারপরও শুরু হয়নি মামলার শুনানি। ন্যায় বিচারের আশায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের দ্বারস্থ মৃতের পরিবার।
ঘটনাটি ঘটেছিল নদীয়ার গাংনাপুর থানার অন্তর্গত কামারগড়িয়া গ্রামে। গত ২৪ জুন ভোররাতে স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম মণ্ডল(৪০) নামে এক যুবককে অচৈতন্য অবস্থায় বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রতিবেশীরা তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রথমে ঘটনাটি স্বাভাবিক মৃত্যু বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু, ওই যুবকের মৃত্যুর কয়েক দিনের মধ্যেই একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। অভিযোগকারী পক্ষের দাবি, সেই অডিও ক্লিপে মৃতের স্ত্রী রেশমা বিবি ও শাশুড়ি মর্জিনা বিবিকে ওই যুবককে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। যদিও সেই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি ‘বর্তমান’।
এদিকে, অডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর মৃতের বাবা আবু উহাহেদ মণ্ডল গাংনাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেপ্তার করে মৃতের স্ত্রী তার বাবা আছের আলি মণ্ডল, মা মর্জিনা বিবি এবং তাঁদের এক সহযোগীকে। পরে এক অভিযুক্ত আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়। অবশ্য বাকিরা এখনও বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছে।
পরবর্তীতে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, পরকীয়া সম্পর্কের জেরে পরিকল্পিতভাবে ইলেকট্রিক শক দিয়ে আবুল সাহেবকে খুন করা হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই গাংনাপুর থানার পক্ষ থেকে রানাঘাট আদালতে চার্জশিটও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু, এরপর থেকে মামলার কোনও অগ্রগতি হয়নি। কারণ ওই মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী নিয়োগ করা হয়নি। অগত্যা, নদীয়ার জেলাশাসক, রানাঘাট জেলা পুলিশের এসপি এবং ডিএসপির (বর্ডার) কাছে চিঠি দিয়ে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটার নিয়োগ করার আবেদন করেছে মৃতের বাবা। ঘটনা প্রসঙ্গে মৃতের পরিবারের দাবি, অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তি না হলে তারা আশাহত হবে। তিনি বলেন, ঘটনার পর চার মাস কেটে গিয়েছে। আমার ছেলেকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। আমরা দ্রুত স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটার নিয়োগের আবেদন জানাচ্ছি।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট জেলা পুলিশের এসপি আশিস মৌর্য বলেন, সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করা হয়নি এমনটা নয়। একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে অবশ্যই নিয়োগ হবে। যেহেতু ঘটনার পর টানা পুজোর ছুটি চলছিল তাই কিছুটা দেরি হয়েছে। এবার বিচার প্রক্রিয়ায় দ্রুততা আসবে। পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছে। আমরা চার্জশিটও দিয়ে দিয়েছি। - নিজস্ব চিত্র