• পার্ক স্ট্রিটে হোটেলের বক্স খাটে দেহ! নতুন বোর্ডারের নাকে দুর্গন্ধ আসতেই খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে
    বর্তমান | ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বক্সখাটের মধ্যে দেহ! তাও হোটেলে। ঘটনাস্থল পার্ক স্ট্রিট থানার অন্তর্গত রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের একটি হোটেল। ২২ অক্টোবর সেখানে ঘর ভাড়া নেয় দুই যুবক। তখন বিকেল পাঁচটা। তারা জানায়, ওড়িশা থেকে এসেছি। একটা কাজে। পাঁচ-ছ’ঘণ্টার জন্য ঘর চাই। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে যাব। ওড়িশার ঠিকানার আধারের ফোটোকপিও জমা দেয় তারা। ওই দুই যুবকের সঙ্গেই ছিল পার্ক স্ট্রিটের কলিন লেনের বাসিন্দা রাহুল লাল (৩০)। তিনতলার একটি ঘরে তাদের নিয়ে যান হোটেল বয়। রুম খুলে চাবি দিয়ে দেন তিনি। কিছুক্ষণ পর ‘দুই অতিথি’ বেরিয়ে যায় এবং মদের বোতল নিয়ে ঢোকে। রাত ১১টা নাগাদ চেক আউট করে তারা। ভাড়া মিটিয়ে। হোটেল ম্যানেজার জানতে চান, অন্য যুবক কোথায়? তারা জানায়, সে তো অনেকক্ষণ বেরিয়ে গিয়েছে। কথা বাড়াননি ম্যানেজার। ৩০২ নম্বর ঘর ‘চেক’ করতে পাঠিয়ে দেন হোটেল বয়কে। তাঁর চোখেও তেমন কিছু পড়েনি। টনক নড়ে পরের দিন, ২৩ অক্টোবর। একটি পরিবার ওই ঘরই ভাড়া নেয়। বিছানার চাদর পাল্টে দেন রুম বয়। প্রথম থেকেই নতুন বোর্ডারের নাকে দুর্গন্ধ ঠেকছিল। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তার তীব্রতা বাড়তে থাকে। রুম ফ্রেশনার ব্যবহার করেও তা চাপা যাচ্ছিল না। নতুন বোর্ডাররা সেখানে একরাত কাটিয়েও ফেলেন। পরদিন, অর্থাৎ শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ দুর্গন্ধে টিকতে না পেরে রিসেপশনে ফোন করে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। সাফাইকর্মীরা এসে উৎস খুঁজতে শুরু করেন। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন, ইঁদুর মরেছে। কিন্তু এসি ডাক্ট, ফলস সিলিং দেখেও কিছু পাননি তাঁরা। পরে ওই বোর্ডার সন্দেহের বশেই খাটের বক্সটি খোলেন। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়তে শুরু করে রক্ত। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় পার্ক স্ট্রিট থানায়। উদ্ধার হয় যুবকের পচাগলা দেহ। কে সেই যুবক? সিসি ক্যামেরা দেখে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে, এই ব্যক্তিই রাহুল লাল। সেই তিন নম্বর যুবক। চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগে সে পার্ক স্ট্রিট থানার হাতে আগে ধরা পড়েছিল। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। চিকিৎসরা জানিয়েছেন, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। মাথায় আঘাতের চিহ্নও রয়েছে।

    প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, পলাতক ওই দুই অভিযুক্ত পুরনো সামগ্রী কেনাবেচা করে। সেই সূত্রেই তাদের সঙ্গে রাহুলের পরিচয়। মনে করা হচ্ছে, হোটেলের রুমে এমন পুরনো মালপত্রই নিয়ে এসেছিল রাহুল। সেখানে তাঁর সঙ্গে দু’জনের বচসা হয়ে থাকতে পারে। আর তার থেকেই খুন। কিছু জিনিস তারা নিয়ে গিয়েছে বলেই প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। তবে হোটেলের মধ্যে কেন বক্সখাট রাখা হয়েছিল? কে অনুমতি দিয়েছিল? তদন্তে এই প্রশ্ন উঠে আসায় হোটেল কর্তৃপক্ষও কিছুটা ব্যাকফুটে। যদিও এই মুহূর্তে পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ পলাতক দুই যুবক। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে দুই অভিযুক্তের খোঁজে ইতিমধ্যেই ওড়িশা রওনা দিয়েছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টিম।
  • Link to this news (বর্তমান)