নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: স্ত্রী যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। হাসপাতালে তাঁকে দেখতে এসে হারিয়ে যাওয়া শ্বশুরের হদিশ পেলেন জামাই। ঘটনা চমকপ্রদ হলেও বিষয়টি সহজ ছিল না। তবে ঘটনার গতিপ্রকৃতিতে তাজ্জব বনে গিয়েছেন হাসপাতাল কর্তারা। ঘটনাটি ঘটেছে শ্রীরামপুরের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। ওই হাসপাতালেই গত ৮ আগস্ট থেকে ভর্তি ছিলেন নবতিপর মধুসূদন বাউড়ি। মানসিক ভারসাম্যের সমস্যার কারণে চণ্ডীতলার কুমিরমোড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে মধুসূদনবাবু নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। শেওড়াফুলি থেকে তাঁকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে শ্রীরামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা বলতে না পারায় গত দু’মাস ধরে তিনি হাসপাতালের একতলার জেনারেল ওয়ার্ডে রয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধ তাঁর পাশের বেডের একজনকে বলেছিলেন যে, তিনি ৩০ বছর বাঁকুড়ায় ছিলেন। সেই সূত্র ধরেই ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন হাসপাতালের সহকারী সুপার ডাঃ বাসুদেব পাল। রেডিও ক্লাবের সদস্য অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস ও তাঁর টিম নিখোঁজদের সন্ধান দেওয়ার কাজ ধারাবাহিকভাবে করে চলেছে। তাঁরাই হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাঁকুড়াতে কোনও সন্ধান মেলেনি। কিন্তু মিলে যায় বংশীচন্দ্র পালের খোঁজ। চণ্ডীতলার জনাইয়ের বাসিন্দা বংশীবাবু, মধুসূদনবাবুর জামাই। তিনি জানান, মধুসূদনবাবুর মেয়ে অর্থাৎ তাঁর স্ত্রী পদ্মা যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সেই সুবাদে সুপার স্পেশালিটিতে তিনি প্রায় প্রতিদিনই যাচ্ছেন। বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে শুক্রবার তিনি ‘নিখোঁজ’ শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করেন। বলেন, ভাবতেই পারছি না। স্ত্রী আছেন চারতলায়, আর একতলায় ‘নিখোঁজ’ শ্বশুর! বিস্মিত হাসপাতালের সহকারী সুপারও। তিনি বলেন, হাসপাতালে সব কিছুর খোঁজ রাখি। যাঁর পরিবারকে আমরা খুঁজছি, তাঁরা হাসপাতালেই আছেন, অথচ একথা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারিনি। এ চমৎকার ছাড়া কিছু নয়। অম্বরীশবাবু বলেন, চমৎকার কি না, জানি না। তবে পরিবারের কাছে হারানো সদস্যকে ফিরিয়ে দেওয়ার আনন্দটা আমরা, রেডিও ক্লাবের সদস্যরা উপভোগ করি। আর নার্স থেকে হাসপাতাল কর্মী— সকলেই বলছিলেন, দুই সদ্যোজাতই ঠিক তাদের দাদুকে ফিরিয়ে দিল বাড়িতে।