বক্স খাটের মধ্যে লাশ, উপরে রাতভর ঘুম দম্পতির, পার্ক স্ট্রিটে আতঙ্কের নাম রুম নম্বর ৩০২!
প্রতিদিন | ২৫ অক্টোবর ২০২৫
অর্ণব আইচ: হোটেলের ৩০২ নম্বর ঘরভাড়া নিয়েছিলেন দম্পতি। রাতে ছিলেন হোটেলে। সকালে পচাগন্ধ পেতেই ডাকেন কর্মীদের। শেষ পর্যন্ত বক্স খাট খুলতেই আতঙ্কে ওঠেন তাঁরা। রক্তশূন্য হয়ে যায় মুখ। যে বিছানায় দম্পতি ঘুমিয়ে ছিলেন সেই বক্সের খাটে থেকেই উদ্ধার যুবকের রক্তাক্ত দেহ। পার্ক সিস্ট্রের হোটেলে যুবকের দেহ উদ্ধারে ঘটনায় সামনে এসেছে হাড়হিম তথ্য।
পুলিশ জানিয়েছে, যুবকের নাম রাহুল লাল। পিকনিক গার্ডেনে তাঁর মামার কাছে থাকতেন যুবক। মৃত ওই যুবক নিজেই একটি ভুয়ো আধার কার্ড জমা দিয়ে হোটেলে চেক ইন করেন। রাহুল নিজের ভাইয়ের একটি আধার কার্ডের কপি হোটেলে জমা দিয়েছিলেন। এই যুবক নিজে মাদকাসক্ত ও তাঁর বিরুদ্ধে পার্ক স্ট্রিট-সহ কলকাতার বিভিন্ন থানায় চুরি-সহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। বুধবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ রাহুল তাঁর দুই ‘খুনি’ সঙ্গীকে নিয়ে রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের ৩০২ নম্বর রুমে ওঠেন। কয়েক ঘণ্টার জন্য ঘরভাড়া নেয় তাঁরা। সন্ধ্যা থেকেই তিনজন মদ্যপান শুরু করেন। হোটেলের সিসিটিভিতে দেখা গিয়েছে, বেশি রাতের দিকে একজন বেরিয়ে যায়। সে রাত ১১টা ২০ মিনিট নাগাদ হোটেলে ফিরে আসে। ঘরের ভিতর সে যায়। এর কিছুক্ষণ পর দু’জন মিলে রুম থেকে বেরিয়ে হোটেলের বাইরে চলে যায়। রাতে হোটেলের কর্মীরা কিছু বুঝতে পারেননি। পুলিশের মতে, মদ্যপানের সময়ই দু’জন মিলে গলায় কাপড় জড়িয়ে রাহুলকে খুন করে। এরপর বক্স খাটের মধ্যে তার দেহ রেখে পালিয়ে যায়। রাহুলের মোবাইলের সূত্র ধরে পুলিশ জেনেছে, দুই আততায়ীই আসলে ওড়িশার বাসিন্দা।
গত বুধবার রাতে ঘটে এই ঘটনাটি। বৃহস্পতিবার বক্স খাটের ভিতর থেকে রক্ত চুঁয়ে এসে পড়েছিল ঘরের মেঝেয়। কিন্তু সাফাইকর্মী কালো হয়ে যাওয়া রক্ত অন্য কোনও তরল মনে করে মুছে ফেলে চলে যান। এরপরই ওই ঘরে চেক ইন করেন এক দম্পতি। সারাদিন বাইরে থাকার পর রাতে তাঁরা ওই বিছানায় ঘুমোন। বুঝতেও পারেননি যে, তাঁদের বিছানার নিচে রয়েছে লাশ। শুক্রবার সকালে ঘর থেকে পচা গন্ধ বের হওয়ায় তাঁদের সন্দেহ হয়। হোটেলের কর্মীদের ডাকলে প্রথমে ঘরের ভিতর কিছু পাননি। শেষ পর্যন্ত বক্স খাটটি খুলে বের করতেই আঁতকে ওঠেন ওই দম্পতি ও হোটেলের কর্মীরা। পচতে শুরু করা দেহটির মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, দড়ির মতো কোনও বস্তু দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই যুবককে।
রাহুলের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। নিজে মাদকাসক্তও। ফলে তার ‘সঙ্গী’ দুই আততায়ীও অপরাধ জগতের বলে সন্দেহ পুলিশের। তাদের সঙ্গে রাহুলের পুরনো গোলমাল ছিল, এমনই সম্ভব। তাদের মধ্যে টাকার লেনদেন ঘিরে গোলমালের সম্ভাবনা রয়েছে। তারই জেরে রাহুলকে খুনের উদ্দেশ্য নিয়ে তারা হোটেলের ঘরভাড়া নেয় বলে সন্দেহ পুলিশের। রাহুলকে অতিরিক্ত মদ্যপান করিয়ে তাঁকে খুন করা হয় বলে পুলিশের সন্দেহ। খুনের পর দুই আততায়ী ওড়িশা বা ভিনরাজ্যে পালিয়েছে বলে অভিমত পুলিশের। মোবাইলের সূত্র ধরে তাদের শনাক্তকরণ ও সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।