তাপমাত্রার পারদ মেপে পাতা তোলা বন্ধের সাবেকি প্রথায় কি আবার ফিরছে চা পর্ষদ? এ প্রশ্ন এখন ঘোরাফেরা করছে চা মহল্লায়। নভেম্বরের শেষ দিনেই চা পাতা তোলা বন্ধ হচ্ছে না বলে আশায় চা উৎপাদকেরা। শীতের শুখা সময়ে চা পাতা তোলা বন্ধ করে দেয় চা পর্ষদ তথা টি বোর্ড। গত বছর পাতা তোলা বন্ধের সময় এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল নভেম্বরের শেষ দিনে। তা নিয়ে নানা বিতর্কও হয়েছিল।
চা উৎপাদকেরা দাবি করেছিলেন, এমন সিদ্ধান্তে চা শিল্পে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সারা বছর ধরে চা উৎপাদকেরা কখনও চা পর্ষদে কখনও কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকে দাবি জানিয়েছেন, যেন ৩০ নভেম্বরে চা পাতা তোলা বন্ধ না করা হয়। এ বছর অক্টোবর শেষ হতে চললেও এখনও ৩০ নভেম্বরে পাতা তোলা বন্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি। সে কারণেই চা উৎপাদকের আশা, আগের মতো শীত কতটা পড়ছে তা মেপে পাতা তোলা বন্ধের সিদ্ধান্ত হতে পারে।
সম্প্রতি ডুয়ার্স-তরাইয়ে বিপর্যয় ঘটেছে। ধসে পাহাড়ের চা বাগিচাতেও ক্ষতি হয়েছে। চা উৎপাদকদের দাবি, কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে কারখানার ক্ষতি, শ্রমিক কলোনিতে যাওয়ার রাস্তা থেকে শুরু করে শ্রমিক আবাসনের ক্ষয়ক্ষতি তো রয়েইছে। সবই বোঝা বাড়িয়েছে চা বাগিচার। যার প্রভাব সরাসরি চা অর্থনীতিতে পড়বে, এই পরিস্থিতিতে চা পাতা তোলা বন্ধের সময় এগিয়ে নিয়ে এলে সেটি দ্বিগুণ আঘাত ডেকে আনবে বলেই দাবি করছেন উৎপাদকেরা। কারণ, তাতে অন্তত এক মাসের উৎপাদন কমে যাবে।
চলতি বছরে চা উৎপাদন গত বছরকে ছাপিয়ে গিয়েছে উৎপাদন। এই পরিস্থিতিতে নভেম্বরেই পাতা তোলা বন্ধ হয়ে গেলে রাজস্ব ক্ষতি অনিবার্য বলে দাবি। চা পরিচালকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের এক সর্ব ভারতীয় কর্তার কথায়, “উত্তরবঙ্গের আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। তাতে নভেম্বরে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া সঠিক নয়। চা প্রেমীরা ভাল স্বাদের চা থেকেও বঞ্চিত হবেন।”
ছোট চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “বন্যায় অন্তত ৪০০টি চা বাগানে ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নভেম্বরে চা উৎপাদন বন্ধ করতে হলে চা বাগানে আগামী মরসুমে পাতা তোলার মতো পুঁজিও অনেকের থাকবে না।”
চা পর্ষদের একাংশের দাবি, গত বছরের সিদ্ধান্ত পরীক্ষামূলক ছিল। আগামী সপ্তাহেই চা পর্ষদে শুখা মরসুমে বন্ধ নিয়ে বৈঠক রয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হতে পারে।