• খড়ের আকাল, বরাত কমাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা
    আনন্দবাজার | ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • চাহিদা মতো খড় পাচ্ছেন না কোলাঘাটের মৃৎশিল্পীরা। উৎসবের মরসুমের প্রতিমার চাহিদা মোটামুটি মিটিয়ে দিতে পেরেছেন। কিন্তু জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তৈরি করতে গিয়ে খড়ের অভাব টের পাচ্ছেন তাঁরা। জোগান কম থাকায় দ্বিগুণ দামে খড় কিনতে হচ্ছে।

    কোলাঘাট ব্লকে ১০-১২ জন মৃৎশিল্পীর শিল্পালয় রয়েছে। প্রতি বছরই পুজোর মরসুম শুরুর আগেই বেশ কয়েক কাহন খড় মজুত করে রাখেন শিল্পীরা। আগের তুলনায় দাম বাড়ায় এ বছর খুব বেশি খড় মজুত করতে পারেননি।

    কী কারণে খড়ের জোগান কম? মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত কারণের সঙ্গে প্রশাসনিক গাফিলতিও রয়েছে। গত বছর বন্যায় ভেসেছে আমন ধানের চাষ। ধান-খড় কিছুই চাষির বাড়িতে আসেনি। এখন ধান কাটতে যন্ত্র ব্যবহার হয়। তাতে গোটা খড়ের আঁটি মেলে না। মৃৎশিল্পীদের আরও অভিযোগ, কোলাঘাট ব্লকের নিকাশি সমস্যা থাকায় সারা বছরই জমিগুলো জলমগ্ন হয়ে থাকে। ফলে হেমন্তের আমন ধানের চাষ এক প্রকার উঠে গিয়েছে।

    আমনের লম্বা খড় ছাড়া বড় প্রতিমা তৈরির কার্যত অসম্ভব বলে জানাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা। আর যার কারণে আমন ধানের খড় তাঁদের আনতে হচ্ছে নন্দকুমার ও ময়না ব্লক থেকে। এতে পরিবহণ খরচ বেড়েছে। আবার হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বছর দুয়েক আগেও এক কাহন (১৬ পণ) খড় মৃৎশিল্পীরা কিনতেন ১৮০-২০০ টাকায়। সেই খড়ই এখন ৪৫০-৫০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে তাঁদের। এ দিকে এখনও আমনের ধান ওঠেনি। গবাদি পশুর জন্য মজুত রাখতে আগের খড় বিক্রি করতে চাইছেন না চাষিরা। ফলে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা গড়তে গিয়ে খড়ের আকালে সমস্যায় কোলাঘাটের মৃৎশিল্পীদের শিল্পালয়গুলি।

    মৃৎশিল্পী রাজেশ পাল বলেন, ‘‘প্রতিমার কাঠামো গড়ার জন্য আমরা দু’টো জিনিস ব্যবহার করতে পারি খড় ও জুন ঘাস। জুনের থেকে খড়ের দাম কম হয়। খড়ের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় আমরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। জগদ্ধাত্রী ঠাকুরের একাধিক বরাত থাকলেও খড়ের অভাবে তা নিতে পারিনি। মাত্র দু’টি প্রতিমাতেই থেমে যেতে হয়েছে। অন্যান্য ব্লক থেকে ঠাকুর নিয়ে আসছেন সংগঠকেরা।’’

    বড়িশা গ্রামের উত্তম মুখোপাধ্যায় কোলাঘাট ব্লকের সবচেয়ে পুরনো মৃৎশিল্পী। তিনি বলেন, ‘‘আগে ১০-১২ জনকে নিয়ে শিল্পালয়ে কাজ করতাম। কিন্তু খড়ের অভাব হওয়ায় ঠাকুরের মেড় বেশি সংখ্যায় বানিয়ে উঠতে পারছি না। তাই এখন চার জনকে নিয়ে কাজ করি। আর দূর থেকে খড় আনতে গেলেও পুলিশি ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয় আমাদের।’’

    খড়ের অভাবে তাঁরা কাজহারা হতে পারেন। এমন আশঙ্কাও রয়েছে মৃৎশিল্পীদের।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)