• অজয়ের পাড়ে আবার ‘শেল’, আতঙ্কে স্থানীয়েরা
    আনন্দবাজার | ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • মাসখানেকের আগে অজয় নদের পারে বোলপুরের লাউদহ গ্রামে একটি বোমার শেল উদ্ধার হয়। বুধবার পানাগড় থেকে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞেরা এসে শেলটি নিষ্ক্রিয় করে। বৃহস্পতিবার রাতেই আবার প্রায় একইরকম দেখতে একটি বস্তুর খোঁজ মিলল সেই অজয় নদের ধারে লাউদহ গ্রামেই। স্থানীয়দের আশঙ্কা এটিও শেল হতে পারে। বার বার এমন জিনিস মেলায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। এ অঞ্চলের আশপাশে বালি তোলা হয়। তাই অনেকে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও করছেন। তাঁদের দাবি, এলাকায় আরও এমন শেল আছে কি না তা প্রযুক্তির সাহায্যে খতিয়ে দেখুক পুলিশ, প্রশাসন।

    স্থানীয় সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে অজয়ের পারে কয়েকজন যুবক মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সে সময়ে তাঁদের নজরে আসে একটি ভারী লোহার সিলিন্ডারের মতো বস্তু নদের চড়ে পড়ে রয়েছে। খবর ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার সকালেই সেখানে অনেকে ভিড় জমান। কয়েকজন গ্রামবাসী মিলে বস্তুটিকে ডাঙায় তোলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বোলপুর থানার পুলিশ। পুলিশ এসে জায়গাটি ঘিরে দেয়।

    পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, অজয়ের পারে বেশ কয়েক বার শেল উদ্ধার হয়েছে।দুবরাজপুরের কোটা, লোবার মতো জায়গায়ও শেল উদ্ধার হয়েছে। অজয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে বৈধ, অবৈধ একাধিক বালিঘাট। এ দিন যেখান থেকে শেলটি উদ্ধার হয়েছে তার থেকে মেরেকেটে এক কিলোমিটারের মধ্যে একটি বৈধ বালিঘাট রয়েছে। সেখানে এমন বোমা থাকলে বিপত্তির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ কবির, রবিউল মল্লিকরা বলেন, “আমরা বৃহস্পতিবার রাতে নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। তখন এটি নজরে আসে। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে পুলিশে খবর দিয়েছি।”

    সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক পার্থশঙ্খ মজুমদার বলেন, ‘‘কেন্দুলা বাস স্ট্যান্ডের পূর্ব দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের ওড়গ্রাম বিমানঘাঁটি ছিল। ফলে, ওই অঞ্চলে বোমার শেল পাওয়া সম্ভব।’’ আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার সঙ্গে যুক্ত থাকা সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “এক সময়ে এই বিস্তীর্ণ এলাকায় সেনার ঘাঁটি তৈরি হয়েছিল। আমার অনুমান এ অস্ত্রগুলি সে সময়ের।”

    প্রাক্তন বায়ু সেনাকর্মী ও বর্তমানে বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা আধিকারিক সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটিকে দেখে মনে হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বোমা। হতে পারে এটি এমটোয়েন্টি নাইন ক্লাস্টার বোমা। অনুমান মিললে এটি অত্যন্ত শক্তিশালী বিষ্ফোরক। এটি মূলত ব্যবহার করা হত রানওয়ে বা সেনা ছাউনি ধ্বংস করতে। ১৯৪৪-৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমেরিকান সেনা গুসকার বিমানঘাঁটি ব্যবহার করত। হয়তো কোনও বোমারু বিমান এই বোমাগুলি নিয়ে উড়ান দেয় এবং কোনও কারণে ফেরত আসার সময় সেফ ডিসপোজালের জন্য অজয়ের নদে ফেলে দেয়।’’

    স্থানীয়দের দাবি, তাঁরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এ অঞ্চলে আরও এমন বোমার শেল রয়েছে কি না খুঁজে দেখুক প্রশাসন। পার্থশঙ্খেরও দাবি, ‘‘জয়দেব কেন্দুলি থেকে লাউদহ বা আরও নীচ পর্যন্ত অজয় নদীর দু’দিকেই বোমা সন্ধানী আধুনিক যন্ত্র দিয়ে স্ক্যান করা খুব জরুরি। এখন যন্ত্র দিয়ে এ সব অঞ্চলে বালি তোলা হয়। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা হতে পারে।’’

    জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, “বস্তুটি দেখে আমাদেরও বোমা বা বিস্ফোরক জাতীয় কিছু মনে হচ্ছে। তাই শেটিকে ঘিরে রাখা হয়েছে। এ ধরনের বোমা বা বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার জন্য সেনাবাহিনীকে খবর দেওয়া হয়েছে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)