১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর, নিজেরই নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। কৃষ্ণনগরে তখন জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমী চলছে। সেই খবর আসতেই গোটা কৃষ্ণনগর শহরে উৎসবের আলো আচমকা নিভে যায়।
পরের দিন বিসর্জন। শহরের বারোয়ারিগুলি একত্রে সিদ্ধান্ত নেয়, এ বার বিসর্জনের শোভাযাত্রায় বাজনা বাজবে না, জ্বলবে না আলো। নিষ্প্রদীপ রাজপথ দিয়ে একের পর এক প্রতিমা সাঙে চড়ে রাজবাড়ি ঘুরে চলেছে বিসর্জন ঘাটের দিকে। তখনই আমিনবাজারের কাছে ঘটে গেল দুর্ঘটনা। আচমকা আগুন ধরে যায় চাষাপাড়া বারোয়ারির বুড়িমা-র চুলে। দাউ-দাউ করে জ্বলে ওঠে বিগ্রহের চুল। যদিও অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে নিভিয়ে ফেলা হয় সেই আগুন, বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগেই। চাষাপাড়া বারোয়ারির সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “বিদ্যুতের তার থেকে কোনও ভাবে আগুনের ফুলকি পড়েই প্রতিমার চুলে আগুন ধরে গিয়েছিল। সেই বছরটা দুই কারণে এই শহরের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে— ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু আর বুড়িমার চুলে আগুন ধরে যাওয়া।”
শুধু বুড়িমা নয়, কাঁঠালপোতা বারোয়ারির ছোটমার ক্ষেত্রেও এই ধরনের দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে শহর। সে-ও প্রায় বছর তিরিশেক আগের ঘটনা। সাঙে চাপিয়ে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিসর্জনের জন্য। রাস্তার দুই পাশে হাজার-হাজার মানুষের ভিড়। আচমকা ছোটমার চুলে আগুন ধরে যায়। সে বারও কোনও মতে সেই আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছিল। সে বারও বিদ্যুতের তার থেকেই আগুন লেগেছিল বিগ্রহের চুলে। এমন একাধিক ঘটনার কথা শোনা যায়, তবে কোনও বারই আগুন বড়সড় আকারনেয় নি। সুদূর অতীতেও কোনও মণ্ডপে আগুন লাগার কথা মনে করতে পারছেন না বর্ষীয়াণ নাগরিকরা।
তবে এখন পরিস্থিতির অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। অবৈধ দখলের কারণে শহরের রাস্তা ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হয়েছে। বেড়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়ও। এখন আরও বেশি মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। ফলে এই সময় কোনও কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা থেকে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থেকে যায়। ফলে আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি বলে মনে করছেন দমকল থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা। চাষাপাড়া বারোয়ারির সভাপতি দেবাশিস সরকার বলেন, “এক বার প্রতিমার চুলে আগুন লাগায় আমরা এখন খুবই সতর্ক থাকি। সমস্ত ধরনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়।”