• ভোটার তালিকায় ‘ভূত’, কমিশনকে তোপ সুজনদের
    আনন্দবাজার | ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে নির্বাচন কমিশনের আগে চাপ বাড়াল সিপিএম। তাদের দাবি, নাগরিকত্ব নির্ধারণের পথ ছেড়ে স্বচ্ছ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরির দিকে নজর দিক কমিশন। রাজ্যের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র যাদবপুর ও সোনারপুর দক্ষিণের কিছু বুথের নমুনা তুলে ধরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, মৃত, ভুত়ুড়ে এবং ভুল ঠিকানার বহুসংখ্যক ভোটারের নাম কী ভাবে তালিকায় রয়ে গেল? এসআইআর-এর নামে ঘুরপথে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) জন্য তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদে আজ, শনিবারই কলকাতায় পথে নামছে ১৭টি নাগরিক ও গণ-সংগঠন।

    এসআইআর শুরুর আগে রাজ্য জুড়ে ভোটার তালিকা পর্যালোচনার সাংগঠনিক প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে সিপিএম। দলীয় স্তরে পর্যালোচনা থেকে উঠে আসা তথ্য নিয়েই শুক্রবার সরব হয়েছেন যাদবপুরের প্রাক্তন বিধায়ক ও সোনারপুর দক্ষিণের ভোটার সুজন। ভোটার তালিকা ধরে তিনি দেখিয়েছেন, যাদবপুরে ৩৪৭টি বুথের প্রতিটিতে গড়ে ৫০ জন মৃত মানুষের নাম রয়েছে। সুজনের বক্তব্য, “এই হিসাবে ৩৪৭টি বুথে মৃতের সংখ্যা অন্তত ১৭হাজার ৩৫০। এ ছাড়া অনেক স্থানান্তরিত ভোটার এবং ভূতুড়ে ভোটারও আছে। সব মিলিয়ে যাদবপুরে ভোটার তালিকায় এমন নাম অন্তত ২০ হাজার। তৃণমূল কংগ্রেস নানা কৌশলে ও ভয় দেখিয়ে এই ভোটের বড় অংশ অবৈধ ভাবে ভোট বাক্সে ফেলে।” সিপিএমের তথ্য অনুযায়ী, যাদবপুরের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪৫ নম্বর পার্টে মোট ভোটার ৯০৭ জন। সেখানে মৃত ৪২ জন। স্থানান্তরিত হয়েছেন ১৯৫ জন। কিন্তু সেই নামগুলি বাদ যায়নি। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, যাদবপুরে ১০৮ নম্বর বুথে মোট ৮০০ ভোটারের মধ্যে ৪৩ জন মৃত ভোটারের নাম সব নথি-সহ কমিশনে জমা দেওয়া হলেও এক জনের নামও বাদ দেওয়া হয়নি।

    সোনারপুর দক্ষিণে সুজনের বাড়ির বুথ ২৫৭ নম্বর। তার সঙ্গেই ২১১ ও ২৫৮ নম্বর বুথের ভোটার তালিকার নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাঁর তোপ, “আমাদের দলের তরফে বার বার স্বচ্ছ, ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের জন্য কমিশনের কাছে দাবি জানানো হলেও সাড়া মেলেনি। এই জরুরি কাজটি না-করে মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এসআইআর-এর জুজু দেখানো হচ্ছে।” তাঁর সংযোজন, “এসআইআর-এ আপত্তি করছি না। কিন্তু তার জন্য সর্বদল বৈঠক হয়নি। ভোটের আগে এটা করার উদ্দেশ্য গরিব মানুষ ও পরিযায়ী শ্রমিকদের নাস্তানাবুদ করা। তার পরে বিজেপি এসে বলবে, তোমাদের রক্ষা করব!” পূর্ববঙ্গ থেকে এসে এখানে বহু বছরের বাসিন্দা পরিবারগুলির কাছে নানা রকম নথি চেয়ে হয়রান করা চলবে না বলেও সিপিএমের দাবি।

    এসআইআর এবং এনআরসি বাতিলের দাবিতে আজ কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে এপিডিআর, নো এনআরসি মুভমেন্ট, আইএফটিইউ-সহ ১৭টি সংগঠন। কলকাতা প্রেস ক্লাবে এপিডিআর-এর তরফে রঞ্জিত শূর এ দিন অভিযোগ করেছেন, “এসআইআরের নামে এনআরসি-র তথ্য সংগ্রহ চলছে। এটি ভোটাধিকার, নাগরিকত্ব হরণের প্রক্রিয়া। বিহারে ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাওয়া মানুষের বেশির ভাগই মুসলিম ও মহিলা। আসলে আরএসএস এবং বিজেপি চায়-না, ভোটাধিকার সর্বজনীন হোক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মুখে যতটা বলছে, কার্যক্ষেত্রে এসআইআর-এর বিরুদ্ধে ততটা প্রতিরোধ তৈরি করছে না।” তাঁদের আরও অভিযোগ, এসআইআর-এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে মানুষের গোপনীয়তার অধিকারও লঙ্ঘিত হচ্ছে।

    এমতাবস্থায় শাসক দলকে বিঁধে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘এসআইআর বিরোধিতায় তৃণমূল এখানে বা দক্ষিণ মেরুতে গিয়ে সমাবেশ করতে পারে, মঙ্গল গ্রহেও যেতে পারে! কিন্তু বিনা এসআইআর-এ নির্বাচন হবে না। এর পর এই নিয়ে কিছু বলার থাকলে নির্বাচন কমিশন বলবে।’’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা দাবি, ‘‘বিজেপি জানে, বাংলায় ২০২৬-এ তারা হারবে। এখন এসআইআর-এর নামে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা হচ্ছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)