এসএসকেএমে নাবালিকাকে ধর্ষণে অভিযুক্ত অমিত মল্লিককে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ফের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। শুক্রবার অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজত থেকে আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতে পেশ করা হলে বিচারক রিম্পা রায় এই নির্দেশ দিয়েছেন। নিয়মানুযায়ী রুদ্ধদ্বার কক্ষে ওই মামলার শুনানি হয়।
বুধবার রাতে গ্রেফতারের পরে বৃহস্পতিবার অমিতকে আলিপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারকের এজলাসে পেশ করা হয়েছিল।
বিচারক এক দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ দিন শুনানির পরে আদালত চত্বরে সরকারি আইনজীবী শিবনাথ অধিকারী এবং মাধবী ঘোষ জানান, ৪ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের আবেদন করা হলেও বিচারক ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত নির্দেশ দিয়েছেন। ওই দুই আইনজীবীর কথায়, ‘‘১৪ বছর বয়সী ওই নাবালিকা লালসার শিকার হয়েছে। অভিযুক্ত কী করে ওখানে পৌঁছল, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। শৌচালয় থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। ঘটনার পুনর্নিমাণ সহ বিভিন্ন তদন্ত প্রক্রিয়া চালাতে হবে। তাই দীর্ঘ পুলিশি হেফাজতের প্রয়োজন।’’
সরকারি আইনজীবীরা আরও জানান, অভিযুক্তের মেডিকো লিগাল ও ডিএনএ পরীক্ষা এবং নাবালিকার ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। তাই উভয়েরই রক্তের নমুনা সংগ্রহের আবেদন করা হয়েছে। নির্যাতিতার এবং তার মায়ের গোপন জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন আদালতে জানানো হয়েছিল। বিচারক দুটি আবেদনই মঞ্জুর করেছিলেন। এ দিন দুজনেরই গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্তের আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য এ দিন আদালত চত্বরের বাইরে বলেন, ‘‘শুধুমাত্র অভিযোগের প্রেক্ষিতে অমিতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ওই নাবালিকা নির্যাতনের জড়িত কিনা তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পুলিশের তরফে একাধিক ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য আবেদন করা হয়েছে। ওই সব রিপোর্ট হাতে আসার পরে অমিত ঘটনায় জড়িত কী না তা স্পষ্ট হবে।’’ আদালত সূত্রের খবর, অমিতের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৫(১) অর্থাৎ ধর্ষণ এবং পকসো (শিশু সুরক্ষা) আইনের ৪-নম্বর ধারা (যৌন নির্যাতন) প্রয়োগ করা হয়েছে। সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘নাবালিকার গোপনাঙ্গে নির্যাতন করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় ১৬ বছরের কম বয়সী বালিকার ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতন হলেও ধর্ষণের ধারা প্রয়োগ করার বিধান রয়েছে। সেই কারণেই ধর্ষণের ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি পকসো আইনের-৪ নম্বর ধারা অর্থাৎ নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের ধারাও প্রয়োগ করা হয়েছে।’’
আদালতে মামলার তদন্তকারী অফিসার লিখিতভাবে দাবি করেছেন, নির্যাতিতা ও তার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে অমিতকে শনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের কয়েকজন সাক্ষীর বয়ান নিয়েছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি নির্যাতিতা ও তার মায়ের বয়ানও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নাবালিকার মেডিকো লিগাল পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই পরীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা উঠে এসেছে বলে কেস ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্তের মেডিকো লিগাল পরীক্ষার জন্য আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও খবর। জানা যাচ্ছে, ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে অভিযুক্তের মেডিকো লিগাল ও ডিএনএ এবং নির্যাতিতার ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।