বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: দেশের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এখনও অন্তরায় রান্নার গ্যাসের দাম। এমনই দাবি করল রিজার্ভ ব্যাংক। চলতি মাসে প্রকাশিত শেষ মাসিক বুলেটিনে তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, এলপিজির দাম বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা চলছেই। তা মূল্যবৃদ্ধিতে ইন্ধন দিচ্ছে।
বিগত কয়েক মাস ধরেই জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রমশ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি বেশ কিছু পণ্য ও পরিষেবায় জিএসটির হার কমলেও, বাজারদর যে নাগালের মধ্যে এসেছে এমন নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদিও বারবার দাবি করেছেন, এটা জিএসটি সাশ্রয় উৎসব। নাগরিকরা হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করছেন। দেশজুড়ে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে এবং অর্থনীতিতে নতুন গতি এনে দিচ্ছে। দেশের মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির হার গত সেপ্টেম্বরে নেমে এসেছে ১.৫ শতাংশে। আগস্ট মাসে তা ছিল ২.১ শতাংশ। কেন্দ্রের মতে, ২০১৭ সালের জুনের পর থেকে মূল্যবৃদ্ধির হার এত নীচে নামেনি। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার অনেকটাই কমে গিয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে শাকসবজি, ডাল এবং মশলাপাতি সস্তা হওয়ার কারণে। সামান্য দাম বেড়েছে বিভিন্ন দানাশস্য, ডিম, ভোজ্যতেল, ফল, দুধ, রান্না করা খাবার এবং নরম পানীয়ের ক্ষেত্রে। পাশাপাশি দামি হয়েছে মাছ, মাংস এবং চিনি।
খাদ্যপণ্য এবং জ্বালানির দামের নামা-ওঠার হিসেবে বাদ দিয়ে যে মূল্যবৃদ্ধির হিসেব কষা হয়, সেপ্টেম্বরে সেই হার ছিল ৪.৬ শতাংশ। আগস্টের তুলনায় যা ০.৪ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ খাবারদাবার ছাড়া বাকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেমন রেহাই পায়নি সাধারণ মানু্য। দেখা যাচ্ছে, ভোগ্যপণ্য অর্থাৎ তেল, সাবান, শ্যাম্পুর মতো পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া দেশের মূল্যবৃদ্ধির হারকে ঊর্ধ্বমুখী করেছে। পাশাপাশি সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির হারে অনেকটাই ইন্ধন দিচ্ছে সোনা এবং রুপোর দর। যোগ্য সঙ্গত করছে আবাসন, তামাকজাত দ্রব্য, মাদক দ্রব্য, জুতো, স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয়। এমনকি যাতায়াত বা পরিবহণের সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোনের মতো যোগাযোগ ব্যবস্থা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে পর্যন্ত খরচ বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি অবশ্য একথা মানেন না। কারণ, সপ্তাহদুয়েক আগেও তিনি বলেছেন, ‘এক জিবি ওয়্যারলেস ডেটার দাম এখন ভারতে এক কাপ চায়ের থেকেও কম!’
এই পরিস্থিতিতে রিজার্ভ ব্যাংক সাফ জানিয়েছে, ‘মুদ্রাস্ফীতিতে লাগাম দেওয়ার ক্ষেত্রে গত সেপ্টেম্বরে কিছুটা সাহায্য করেছিল বিদ্যুৎ খরচ। কিন্তু জ্বালানির মধ্যে রান্নার গ্যাসের দাম বেড়ে থাকা মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানোর ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে।’
২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের ঠিক আগে মার্চ মাসে গৃহস্থের রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডার পিছু ১০০ টাকা কমিয়ে দেয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। তার জেরে কলকাতায় ৯২৯ টাকার সিলিন্ডার নেমে আসে ৮২৯ টাকায়। কিন্তু ভোটপর্ব মিটতে পুরনো মেজাজে ফিরে যায় মোদি সরকার। ‘আচ্ছে দিন’-এ ফের সিলিন্ডার পিছু রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় ৫০ টাকা। গত এপ্রিল থেকে এশহরে গৃহস্থের এলপিজির দাম হয় ৮৭৯ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমলেও, তার সুবিধা পাননি কোটি কোটি গ্রাহক। তবে শুধু গৃহস্থের রান্নার গ্যাস নয়,বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের ক্ষেত্রেও ভোগান্তির অন্ত রাখেনি কেন্দ্র। ১৯ কেজি সিলিন্ডারের দাম কলকাতায় হয়ে রয়েছে ১ হাজার ৭০০ টাকা। চলতি মাসেই তা আবার বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে রান্নার গ্যাসের দর যে সাধারণ মানুষকে মোটেই স্বস্তিতে রাখছে না, সেটাই মনে করে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক।