ধান বিক্রির নতুন নিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা, ফড়েরা নিচ্ছে সুযোগ
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৫ অক্টোবর ২০২৫
ধান বিক্রির নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। ২৫-২৬ অর্থবর্ষে এই নতুন নির্দেশিকা মেনে চাষিদের ধান বিক্রি করতে হবে। নয়া নিয়ম অনুযায়ী একজন চাষি একেবারে সর্বোচ্চ ১৫ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারবেন। গত বছর ধান বিক্রির সীমা ছিল ৩০ কুইন্টাল। এছাড়া সর্বোচ্চ বিক্রির পরিমাণ রাখা হয়েছে ৯০ কুইন্টাল।
নতুন নিয়মের গেড়োয় নাজেহাল প্রান্তিক চাষিরা। অনেক কৃষক পরিবারের সদস্যদের আলাদা আলাদা জমি থাকলেও কৃষক ক্রেডিট কার্ড মাত্র একটি। নতুন নিয়ম অনুযায়ী একটি ক্রেডিট কার্ডে একবারে ১৫ কুইন্টালের বেশি ধান বিক্রি করা যাবে না। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চাষিদের। অনেকে কৃষকের আবার জমির কাগজপত্রও নেই। সে ক্ষেত্রে চাষিরা খোলা বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের।
নতুন নিয়মে সমস্যা যে হচ্ছে তা স্বীকার করেছেন ঝাড়গ্রাম জেলা খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ দপ্তরের আধিকারিক সুজয় দাস। ঝাড়গ্রামের আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘একবারে ১৫ কুইন্টাল ধান বিক্রি নিয়ে প্রান্তিক চাষিরা সমস্যায় পড়ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।‘
ঝাড়গ্রাম জেলায় ছোট ছোট আকারের জমি রয়েছে। পরিবারের একাধিক সদস্যের জমি আলাদা কিন্তু কিষাণ মাণ্ডিতে ধান বিক্রির জন্য সাধারণত একটি ক্রেডিট কার্ডই ব্যবহৃত হয়। এই নিয়মের ফলে জেলার বহু চাষি বিপদে পড়ছেন। এছাড়া প্রান্তিক এলাকার জনজাতি কৃষকদের অনেকেরই জমির কোনও কাগজ নেই। তার ফলে সরকারি মাণ্ডিতে সেই সব কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছেন না।
কৃষকদের বক্তব্য, অনেকেই কম দামে ফড়েদের হাতে ধান তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। মানিকপাড়ার ছানাপাড়া গ্রামের কৃষক সঞ্জয় দত্ত জানিয়েছেন, ‘আমরা তিন ভাই। ভাইয়ের নামে ক্রেডিট কার্ড আছে। ওই কার্ডে ধান বিক্রি করেছি। নতুন নিয়মে এবার বিক্রি করতে পারিনি। খোলা বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হল। ফড়েরা সেই সুযোগ নিল।‘
আরও এক কৃষক জানিয়েছেন, ‘পরিবারের সদস্যরা আলাদা হলেও জমি বাবার নামে। ক্রেডিট কার্ডও একটাই। নতুন নিয়মের ফলে সরকারি দামের চেয়ে ৫০০–৬০০ টাকা কমে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।‘
রাজ্যের বহু জেলার চাষিরা ফাঁপড়ে পড়েছেন। বাঁকুড়ার এক কৃষক জানিয়েছেন, ‘দুইটি ক্রেডিট কার্ড থাকা সত্ত্বেও প্রকৃত চাষিরা ৩০ কুইন্টালের বেশি ধান বিক্রি করতে পারছেন না। বাড়তি ধান খোলা বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। যাঁরা চাষি নন, তাঁদের অনেকেই সামান্য জমি দেখিয়ে কার্ড করে নিয়েছেন। ফড়েরা সেই কার্ড ব্যবহার করে কম দামে কেনা ধান কিষাণ মাণ্ডিতে বিক্রি করছে। প্রকৃত চাষিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সরকারকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সেভাবে নিয়ম তৈরি করতে হবে।‘
অধিকাংশ কৃষকদের মত, ধান বিক্রির সীমা নির্ধারণের জন্য জমির পরিমাণ বিবেচনা করা দরকার। নাহলে ফড়েরা নতুন নিয়মের সুযোগ নেবে। কৃষকরা বঞ্চিত হবে। এখন দেখার খাদ্য দপ্তর এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করে।