• বন্ধুত্ব থাকলেই কাউকে ধর্ষণ করা যায়না, মন্তব্য দিল্লি হাইকোর্টের — অভিযুক্তের আগাম জামিন খারিজ...
    আজকাল | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি হাইকোর্ট স্পষ্ট মন্তব্য করেছে যে, “বন্ধুত্ব কাউকে বারবার ধর্ষণ করার লাইসেন্স দিতে পারে না।” ১৭ বছর বয়সী এক নাবালিকা কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে আদালত এই পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে।

    বিচারপতি স্বর্ণ কান্তা শর্মা এই মন্তব্য করেন, যখন তিনি অভিযুক্তের আগাম জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। ওই ব্যক্তি ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (Bharatiya Nyaya Sanhita – BNS), ২০২৩ এবং শিশুদের যৌন নির্যাতন থেকে সুরক্ষা আইন (POCSO Act), ২০১২-এর অধীনে অভিযুক্ত।

    বিচারপতি বলেন, “যদিও উভয় পক্ষের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল, তবুও সেই বন্ধুত্ব অভিযুক্তকে ভুক্তভোগীকে বারবার ধর্ষণ করা, বন্ধুর বাড়িতে আটকে রাখা এবং নির্মমভাবে প্রহার করার কোনো অনুমতি দেয় না। ভুক্তভোগীর ১৮৩ ধারার অধীনে দেওয়া জবানবন্দি এবং চিকিৎসা প্রতিবেদনে এই অভিযোগের প্রাথমিক ভিত্তি পাওয়া গিয়েছে।”

    আদালত আরও জানায়, অভিযুক্ত এখনও পর্যন্ত তদন্তে যোগ দেননি, যদিও তার জামিন আবেদন এর আগেও চারবার প্রত্যাহার বা খারিজ হয়েছে। অভিযোগের গুরুত্ব এবং প্রমাণ বিবেচনা করে আদালত মনে করেছে যে, অভিযুক্তের আগাম জামিনের দাবি করার মতো কোনো ভিত্তি নেই।

    বিচারপতি শর্মা রায়ে উল্লেখ করেন, “এই আবেদনটি খারিজ করা হলো। তবে এখানে যা বলা হয়েছে তা মামলার মেরিটের উপর কোনো মতপ্রকাশ হিসেবে ধরা যাবে না।”

    এই মামলা দায়ের হয়েছিল দিল্লির সঙ্গম বিহার থানায়। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ৬৪(২), ১১৫(২), ১২৭(২), ৩৫১ ধারার অধীনে (BNS) এবং পকসো আইনের ৪ নম্বর ধারায় অভিযুক্ত।

    এফআইআরের তথ্যানুসারে, ১৭ বছরের ওই নাবালিকা প্রায় তিন-চার বছর ধরে অভিযুক্তের প্রতিবেশী হিসেবে তাকে চিনতেন। ২৬ জুন, ২০২৫ তারিখে সে হামদর্দ এলাকার কাছে অভিযুক্তের সঙ্গে দেখা করতে যায়। অভিযুক্ত তাকে তার বন্ধু নিখিলের গোবিন্দপুরী এলাকার বাড়িতে নিয়ে যায়, যেখানে তাকে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। রাত প্রায় ১০টার সময় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

    ভয়ে এবং মানসিক আঘাতে কিশোরী প্রথমে পরিবার বা পুলিশকে কিছু জানায়নি, এমনকি প্রথমবার থানায় নেওয়া হলে চিকিৎসা পরীক্ষাও করতে অস্বীকার করে। পরে, ৫ জুলাই ২০২৫ তারিখে, তার মা ও অভিযুক্তের পরিবারের মধ্যে ঝগড়ার পর, ভুক্তভোগী তার মাকে সমস্ত ঘটনাটি জানায়। এরপরই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।

    পরবর্তীতে এইমস (AIIMS)-এ করা চিকিৎসা পরীক্ষায় তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় — বাঁ চোখের নিচে দাগ, যৌনাঙ্গে হালকা ক্ষতচিহ্ন এবং যোনি ছিদ্রের ক্ষত— যা তার বয়ানকে সমর্থন করে।

    বিচার চলাকালীন অভিযুক্তের আইনজীবী যুক্তি দেন যে অভিযোগ দায়েরের বিলম্ব ঘটনাটিকে সম্মতিপূর্ণ সম্পর্ক হিসেবে প্রমাণ করে। কিন্তু আদালত এই যুক্তি খারিজ করে জানায়, ভুক্তভোগী যেহেতু নাবালিকা, তাই মানসিক আঘাত ও লজ্জা তার নীরবতার কারণ হতে পারে।

    বিচারপতি বলেন, “সে নাবালিকা হওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল এবং লজ্জা ও ভয়ে পরিবারের কাছে কিছু জানাতে পারেনি। তার ১৮৩ ধারার অধীনে দেওয়া জবানবন্দি ধারাবাহিক ও চিকিৎসা-প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।”

    আদালত আরও স্পষ্ট করে জানায়, বন্ধুত্ব কোনোভাবেই বারবার যৌন নির্যাতন বা শারীরিক হিংসার অজুহাত হতে পারে না। অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় আদালত অভিযুক্তের আগাম জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়।

    রায়টি ঘোষণা করা হয় ১৭ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে। থাকলেই কাউকে 
  • Link to this news (আজকাল)