সরকারি হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে শনিবার নবান্নে বৈঠক ডাকা হয়। সেই বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, কালীঘাটের বাড়ি থেকে মুখ্যসচিবের ফোন মারফত বৈঠকে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দিয়ে নিজের আশঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চক্রান্ত করে কিছু ঘটানো হচ্ছে কিনা তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ এবং সুপার। রাজ্যের সমস্ত জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং সমস্ত পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনারেরাও বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাও এদিন বৈঠকে ছিলেন। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকেরাও যোগ দিয়েছিলেন। বৈঠকে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মতো জোর দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল কর্মীদের প্রশিক্ষণ, নির্দিষ্ট পোশাক, ডিউটি রস্টারের দিকে। এছাড়া কর্মী নিয়োগের আগে তাঁদের অতীত কাজের রেকর্ড খুঁটিয়ে দেখার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে সিসিটিভি ‘মনিটরিং’ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোন হাসপাতালে কত সিসিটিভি অকেজো এবং তা ঠিক করতে আনুমানিক কত খরচ হতে পারে তা রাজ্য সরকারকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সক্রিয় সিসিটিভির উপর ঠিকঠাক নজরদারি চালানো হয় কি না, তা নিয়েও প্রশ্নও তুলেছেন মমতা। এসএসকেএম হাসপাতালের মহিলা শৌচালয়ে পুরুষ কী ভাবে ঢুকে পড়ল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিরাপত্তাকর্মীদের সচিত্র পরিচয়পত্র সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। তাদের পোশাক সাধারণত এক রকম হয়। ওই ধরনের পোশাক বাইরেও কিনতে পাওয়া যায় বলে বৈঠকে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাই সচিত্র পরিচয়পত্র গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, এসএসকেএম হাসপাতালের ঘটনায় অভিযুক্ত অন্য একটি সরকারি হাসপাতালের অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মী। শিয়ালদহ চত্বরের সেই হাসপাতাল থেকে তিনি কী ভাবে এসএসকেএমে গেলেন এবং কী ভাবে সকলের নজর এড়িয়ে গেল, সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এক হাসপাতালের কর্মী যাতে অন্য হাসপাতালে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য কঠোর ভাবে নজরদারি চালানোর কথা বলেছেন মমতা। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বৈঠকে পুলিশকর্তাদের ডেকে নেওয়াকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন প্রশাসনিক মহলের অনেকে।
১) এজেন্সি থেকে প্রাইভেট সিকিউরিটিদের পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক। চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
২) সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি মনিটরিং করতে হবে। মাঝে মাঝেই ফায়ারের জন্য মক ড্রিল করতে হবে।
৩)ওয়ার্ডের ভিতরে বহিরাগতরা ঢুকতে পারবে না।
৪)প্রতিদিনের ডিউটি রোস্টার তৈরি করতে হবে।
৫) রোল কল করতে হবে।
৬) ডিউটি শেষ হওয়ার সময়েও রোল কল করতে হবে।
শনিবার বৈঠকে এসএসকেএম হাসপাতালের অধ্যক্ষ অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বলে খবর। তবে এদিন হাসপাতালগুলির নিরাপত্তায় জোর দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের কাজেও জোর দিয়েছেন। এসআইআর শব্দটি মুখে না আনলেও কোনও কিছুর জন্য যাতে ডেভলপমেন্টের কাজ ব্যাহত না হয় এদিনের বৈঠকে ফোন থেকে বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।