‘এসআইআর হলে বাদ যাবে দেড় কোটি ভোটার’, দাবি নিশীথের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
ভোটার তালিকা সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের মন্তব্য ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে রাজ্যে। নিশীথ দাবি করেছিলেন, এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হলে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বে অন্তত দেড় কোটিরও বেশি নাম। কোচবিহার জেলা থেকেই বাদ যাবে তিন লক্ষের বেশি ভোটার। সেই বক্তব্যের জবাবে পাল্টা কটাক্ষ করলেন রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ। তাঁর সাফ কথা— ‘যদি সত্যিই অভারতীয়দের নাম বাদ যায়, তাহলে প্রথমেই বাদ দিতে হবে নিশীথ প্রামাণিকের নাম।’
নিশীথ প্রামাণিকের দাবি অনুযায়ী, ‘সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে প্রায় দেড় কোটির বেশি ভুয়ো ভোটার রয়েছে। কোচবিহারের অনেক গ্রামে দেখা যাচ্ছে, ২০০২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ভোটার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। কোথাও ১৫ জন একই বাবার নাম ব্যবহার করে ভোটার কার্ড বানিয়েছে, কোথাও বাবার বয়স ৬৫, তো ছেলের ৫৫। এই তালিকা যাচাই করলে বাস্তব চিত্র স্পষ্ট হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত ৪০ শতাংশ ভোটারকে ঠিকভাবে ম্যাপিং করা যায়নি। যাঁরা ২০০২ সালের পরে ভোটার হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে সরেজমিনে হাজির হয়ে অন-ক্যামেরা সই করতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে কে আসল ভোটার, কে ভুয়ো।’
বিজেপি নেতার এই বক্তব্যের জবাবে উদয়ন গুহ বলেন, ‘নিশীথ প্রামাণিকের মন্তব্যের উত্তর দেওয়া অর্থহীন। কিন্তু উনি যেহেতু ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছেন, তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি— প্রথমেই তাঁর নামটাই বাদ দিতে হবে। উনি নিজেও আদালতে প্রমাণ করতে পারবেন না যে, তিনি ভারতীয় নাগরিক।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘নিশীথ প্রামাণিক যখন মন্ত্রী হন, তখন বাংলাদেশে লোকজন আনন্দ করে বলেছিল— আমাদের গ্রামের ছেলে ভারতের মন্ত্রী হয়েছে। এটাই তাঁর আসল পরিচয়। আর এখন উনি যেখানেই মুসলমানদের সংখ্যা বেশি, সেখানে ‘মিনি পাকিস্তান’ ট্যাগ লাগাচ্ছেন। এটা আসলে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো। সেই মানুষগুলো নিশীথের থেকেও বেশি দেশপ্রেমী।’
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলার ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখা হলে এক ভয়াবহ তথ্য উঠে আসছে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত তালিকা মেলাতে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ৫২ শতাংশ নামের তথ্য মেলে। অর্থাৎ রাজ্যের ৭ কোটি ৬০ লক্ষ ভোটারের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের তথ্যই যাচাই হয়নি।
এখনও জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার যাচাই বাকি, যা মিলিয়ে আরও প্রায় ৪০ লক্ষ ভোটার যুক্ত হবে। অর্থাৎ মোট ৩.৫ কোটিরও বেশি ভোটারের যাচাই হবে এই প্রক্রিয়ায়। কমিশন সূত্রে খবর, বিহারেও এই একই প্রক্রিয়ায় ২ কোটি ভোটার যাচাই হয়েছিল।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। বুধবারের বৈঠকের পর সহকর্মীদের পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে— ‘এসআইআর যে কোনও দিন ঘোষণা হতে পারে। সাত দিনের মধ্যে ফর্ম ছাপানো, বিএলওদের প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করা এবং অনুবাদ টিম প্রস্তুত রাখতে হবে।’
বার্তায় আরও বলা হয়েছে, এসআইআর ঘোষণার পরদিনই রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক হবে। সেই বৈঠকের নথি বাংলায় অনুবাদ করে পাঠাতে হবে।
রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, বিজেপি নেতাদের এই দাবির নেপথ্যে কি কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে? নাকি সত্যিই এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজ্য থেকে বাদ পড়বে বিপুল সংখ্যক ‘ভুয়ো ভোটার’? ভোটার তালিকা সংশোধনের এই বিতর্কে এখন ফের আগুন লেগেছে বঙ্গ রাজনীতিতে।