• দণ্ডি কাটেন হাজার হাজার ভক্ত, ভদ্রেশ্বরের বুড়ি মা-কে ঘিরে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস
    প্রতিদিন | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • সুমন করাতি, হুগলি: কথিত আছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কৃষ্ণনগরের রাজবাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেছিলেন। পরে চন্দনগরে সেই পুজো ছড়িয়ে পড়ে। এবারেও এই পুজো উপলক্ষে  আলোয় সেজে উঠেছে চন্দননগর। চন্দননগরের ‘বড় মা’ বরাবরই নজরকাড়া। দূরদূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ বড় মা-কে দর্শন করতে যান। বড় মা ছাড়াও আছেন বুড়ি মা।  হুগলির ভদ্রেশ্বরে এই ‘বুড়ি মা’কে দেখার জন্যও অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন। এই পুজো ঘিরেও রয়েছে অতীতের কাহিনি।

    ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলায় ২৩০ বছরে বেশি প্রাচীন এই বুড়ি মা-র পুজো। কথিত আছে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সূত্র ধরেই এই পুজো শুরু হয়েছিল। চাউলপট্টি বাজারে তিনশো বছর আগে। পুজোর সূচনা করেছিলেন কৃষ্ণনগরের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। জাঁকজমক করে পুজো শুরু হয়। তার কয়েক বছর পর ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলায় শুরু হয়েছিল এই বুড়ি মা-র পুজো। কথিত আছে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অন্য দেওয়ান দাতারাম শূর এই পুজো শুরু করেন। এই পুজো নিয়েও কথিত আছে এক ঐতিহাসিক কাহিনি। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একসময় নবাব মুর্শিদকুলি খাঁয়ের হাতে বন্দি হয়েছিলেন। সেসময় দেওয়ান দাতারাম রাজার প্রতিষ্ঠিত দেবীমূর্তিকে নদীপথে তেঁতুলতলায় পালিয়ে নিয়ে চলে এসেছিলেন।

    পরে সেই দেবীমূর্তিকেই নতুন করে প্রতিষ্ঠার পর পুজো শুরু হয়। তারপর থেকে ওই পুজো ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। বুড়ি মা বরাবর জাগ্রত বলে পরিচিত। এই পুজোর ক্ষেত্রে কোনও চাঁদা তোলা হয় না। সাধারণ মানুষ, ভক্তরা যে দান করেন তাতেই পুজো হয়। পুজোর দিনে হাজার হাজার মানুষ মনোবাসনা পূরণের জন্য দণ্ডি কেটে পুজো দেন। নবমীর দিন ভোগের আয়োজন করা হয়। সেই ভোগের জন্য দূরদূরান্ত থেকেও বহু ভক্ত, দর্শনার্থী হাজির হন। শুরুর দিকে এই পুজোয় বলির প্রচলন ছিল। কিন্তু এখন সেই বলি বন্ধ। বুড়ি মার স্থায়ী মন্দিরও আছে। সারা বছর দেবীর কাঠামো ও পট রেখে নিত্যপুজো হয় সেখানে। পুজো কমিটিই সারা বছর মন্দির পরিচালনা করে।

    এবারও বুড়ি মা-র পুজোর প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। সেজে উঠেছে মন্দির চত্বর। আলোকমালা ও বাহারি আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছে গোটা এলাকা। পুজোর দিনগুলিতে প্রচুর মানুষের সমাগম হবে। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ-প্রশাসনও প্রস্তুত বলে জানা গিয়েছে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)