জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ পেয়ে সতর্ক কলকাতা পুরসভা, ছটপুজোর প্রস্তুতিতে দূষণ রুখতে বিশেষ বন্দোবস্ত
আনন্দবাজার | ২৫ অক্টোবর ২০২৫
আগামী সোম ও মঙ্গলবার ছটপুজো। তাই কালীপুজোর বিসর্জন শেষ হতেই ছটের প্রস্তুতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কলকাতা পুরসভা। শহরের বিভিন্ন গঙ্গার ঘাট, পুকুর ও কৃত্রিম জলাশয়ে অস্থায়ী ঘাট নির্মাণ থেকে শুরু করে পরিকাঠামো তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি)-এর নির্দেশ যাতে কোনও ভাবে লঙ্ঘিত না হয়, সে দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। কারণ, ছটপুজো ঘিরে জল ও পরিবেশ দূষণের অভিযোগের জেরে আগেই হস্তক্ষেপ করেছিল এনজিটি। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরের ভিতরে ছটপুজোর আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
প্রতি বছরের মতো এ বারও ছটের সময় বন্ধ থাকবে দুই সরোবর। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) ইতিমধ্যেই সরোবর দু’টির বাইরে ব্যানার টাঙিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী রবিবার সকাল ১০টা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রবীন্দ্র ও সুভাষ সরোবর সাধারণের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। কেএমডিএ সূত্রে খবর, গেট বন্ধ রাখার পাশাপাশি বাইরে ব্যারিকেড ও পুলিশি নিরাপত্তা থাকবে। কয়েক বছর আগে সরোবরের গেট টপকে প্রবেশ করে উপচার পালনের চেষ্টা হওয়ায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এ বারও কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে গত দু’বছর ধরে তেমন কোনও সমস্যা হয়নি বলেই জানিয়েছে প্রশাসন।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের বিভিন্ন গঙ্গার ঘাট ছাড়াও বহু পুকুর ও কৃত্রিম জলাশয় মিলিয়ে মোট ১৮৮টি জায়গায় ছটপুজোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। গঙ্গা ও পুকুর মিলিয়ে মোট ১৫৩টি ঘাট প্রস্তুত রাখা হচ্ছে পুরসভার পক্ষ থেকে। পাশাপাশি কেএমডিএর উদ্যোগে শহরের ১৩টি স্থানে ২৯টি ঘাটে ছটপুজোর আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সব ঘাটে মহিলাদের বস্ত্র বদলানোর জন্য পৃথক ঘর, বায়ো টয়লেট ও আলো-জলের ব্যবস্থাও থাকছে। শহরের ছয়টি ওয়ার্ড— ৬৮, ৮৫, ৮৮ ও ৮৯ নম্বর ওয়ার্ড মিলিয়ে মোট ছ’টি কৃত্রিম পুকুর তৈরি করা হয়েছে, যাতে নিরাপদে পুজো সম্পন্ন হয়।
কলকাতার সবচেয়ে বড় ছটপুজোর আয়োজন প্রতি বছর হয় দহিঘাট ও তক্তাঘাটে, যেখানে উপস্থিত থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পুর কমিশনার ধবল জৈন ইতিমধ্যেই কোন অফিসার কোন এলাকায় দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদের নাম ও ফোন নম্বর-সহ নির্দেশিকা প্রকাশ করেছেন। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, গঙ্গা ও পুকুরের জল যাতে দূষিত না হয়, সেই বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। ছটপুজো শহরের এক বড় সাংস্কৃতিক মিলনমেলা হলেও, পরিবেশরক্ষা এবং নাগরিক সুরক্ষাকেই এ বারের প্রস্তুতির মূল লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।