তিনি ‘মিস ক্যালকাটা’, অপর্ণা সেন। তাঁর পরিচালনা, অভিনয়, ‘স্টাইল স্টেটমেন্টে’ মুগ্ধ আজও দর্শক-অনুরাগীরা। ছবিতে অপর্ণা সেন মানেই দর্শকের সেই ছবি থেকে একটা আলাদা প্রাপ্তির আশা থেকেই যায়। তা অভিনয় হোক কিংবা পরিচালনা। ২৫ অক্টোবর, শনিবার পায়ে পায়ে আশিতে পা রাখলেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী। কিন্তু বয়স তো তাঁর কাছে একটা সংখ্যামাত্র। আজও যেন তিনি চিরসবুজ। পরিচালক-অভিনেত্রী অপর্ণা সেনের জন্মদিন উদযাপনে যাওয়ার আগে তাঁকে নিয়ে কলম ধরলেন পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী।
তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। আমাদের দু’জনের ভাইবোনের মতো সম্পর্ক। পরিচালক ও অভিনেত্রীর ঊর্দ্ধে গিয়েও অপর্ণা সেন, থুরি রিনাদি একজন অত্যন্ত ভালো মানুষ। রিনাদি যখন তাঁর ‘জাপানিজ ওয়াইফ’ ছবি করছে তখন তাঁর সঙ্গে আমিও রেকিতে চলে গিয়েছিলাম। তবে তাঁর কাজের বাইরেও যা সবথেকে বেশি ভালো লাগার, অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো বিষয় তা হল, আশি বছর বয়সেও তাঁর ক্যারিশ্মা। আমি নিজেও রিনাদি’কে বলি, “তোমার আশি বছর বয়স, কিন্তু তোমার যে এনার্জি, তোমার মধ্যে যে কাজের ইচ্ছা এসব মিলিয়ে মনে হয় বয়স তোমার কাছে একটা সংখ্যামাত্র।” আর অপর্ণা সেনের মধ্যে থাকা এই কাজের ইচ্ছা ও এনার্জিটাই সকলের কাছে একটা অনুপ্রেরণা বলা যায়।
একইসঙ্গে বলতে হয়, রিনাদির মধ্যে বয়সকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টা রয়েছে তা দেখলে তাঁর সম্পর্কে ঠিক উলটো ধারণাটা হয়। মনে হয়, তাঁর বয়স আশি তো নয়ই বরং তিরিশেরও কম। তাঁর মধ্যে যে নতুন কাজের ইচ্ছা, পরিকল্পনা রয়েছে এসব দেখলে কেউ বুঝবেই না যে তাঁর বয়স আশি ছুল। রিনাদি মানেই নতুন নতুন কাজের ভাবনা। তিনি এখনও অনেক কিছু ভাবেন, পরিকল্পনা করতে পারেন। এখনও অনেক কিছু করার স্বপ্ন দেখেন। তবে এসবকিছুর পরও মানুষ হিসেবে তাঁর যে বিষয়টা আমাকে সবথেকে বেশি নাড়া দেয় তা হল তাঁর মধ্যেকার সংবেদনশীলতা। যা আমাকে সবথেকে বেশি স্পর্শ করে। সংবেদনশীলতা, সহানুভূতির মতো বিষয় ব্যক্তি অপর্ণা সেনের মধ্যে ভরপুর রয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের খুব ছোট ছোট বিষয় তিনি যেভাবে লক্ষ্য করেন তা সত্যিই বলার মতো। রিনাদি ভীষণ সহানুভূতিশীল একটা মানুষ।
আর তাঁর কাজের কথা? তা বলতে গেলে প্রথমেই যা বলতে হয়, আমি সবসময়ই অভিনেত্রী অপর্ণা সেনের থেকে পরিচালক অপর্ণা সেনকে এগিয়ে রাখি। ছোটবেলায় আমি ওঁর ‘জয় জয়ন্তী’ ছবি দেখে মারাত্মক প্রেমে পড়েছিলাম। ‘আমাদের ছুটি ছুটি’ গানটা শুনতাম আর রিনাদির ছবি কেটে কেটে রেখে দিতাম। তারপর একটু পরিণত হয়ে ‘যুগান্তর’ আর ‘থার্টি সিক্স চৌরঙ্গী লেন’-এর প্রেমে পড়েছিলাম। তাঁকে নিজের ছবিতে পরিচালনা করার অভিজ্ঞতাও কম আনন্দের হয়নি। এক্ষেত্রে ‘অন্তহীন’ ছবির একটা শুটিংয়ের অংশের কথা বারবার মনে পড়ে যায়। এই ছবির শুটিং চলছে ছবিতে ‘ফেরারি মন’ গানের শুটিংয়ে রিনাদি, কল্যাণদা, রাধিকা, রাহুল সকলে বসে রয়েছেন। রিনাদি আমাকে হঠাৎ আমাকে বললেন এত ভালো একটা গান আমার লিপে রাখিসনি কেন? আমি বললাম এটাতে লিপসিঙ্ক নেই, মুহূর্তগুলো ধরব শুধু। এমনটা বললাম তো বটে কিন্তু রিনাদি একেবারেই নিজেকে সামলাতে পারছিল না। বেশ কয়েকবার গুনগুন করে ফেলেছিল শুটিং চলাকালীন।এটা একটা বেশ মজার অভিজ্ঞতা। তবে অভিনেত্রী-পরিচালক সবকিছুর বাইরে ঘরোয়া আড্ডায় রিনাদি এক্কেবারে অন্য মানুষ। ঘরোয়া আড্ডায় এই বয়সেও নাচে-গানে মাতিয়ে রাখেন তিনি। অপর্না সেন সম্পর্কে বলতে গেলে বলতেই হয়, ‘শি ইজ অ্যান এক্সপ্লোরার অ্যান্ড ওয়ান্ডার বোথ।’