• মহারাষ্ট্রে ধর্ষণে অভিযুক্ত সাব-ইনসপেক্টর গ্রেফতার, আত্মঘাতী ডাক্তারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, দাবি পুলিশের
    বর্তমান | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • মুম্বই: মহারাষ্ট্রে মহিলা চিকিৎসকের আত্মহত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সাব-ইনসপেক্টর গোপাল বাদানেকে অবশেষে গ্রেফতার করল পুলিশ। সাতারার পুলিশ সুপার তুষার দোশি বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় বাদানে ফলটন থানায় আত্মসমর্পণ করেন। এরপর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।’ আত্মঘাতী চিকিৎসকের হাতের তালুতে সুইসাইড নোটে এই গোপাল বাদানের নাম লেখা ছিল। এর আগে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার অভিযোগে নাম থাকা পেশায় সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত বাঁকেরকে পুনে থেকে গতকাল রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সাব-ইনসপেক্টর ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, দু’জনের বিরুদ্ধেই আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদের মধ্যে আবার ধৃত ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত বাঁকের হলেন মৃতা যে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন, তার মালিকের ছেলে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের দাবি, প্রশান্ত নামে এই যুবকের সঙ্গে ২৯ বছরের ওই মহিলা চিকিৎসকের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তবে পরবর্তীকালে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এমনকি ২৩ অক্টোবর আত্মহত্যার আগেও ফোনে দু’জনের মধ্যে কথা হয়েছিল। প্রশান্ত বাঁকেরকে জেরা করে আরও তথ্য সামনে আসবে বলেই মনে করছে পুলিশ। 

    পুলিশের বিরুদ্ধে হেনস্তা ও ধর্ষণের অভিযোগ তুলে সরকারি চিকিৎসকের আত্মহত্যার এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই এক সাংসদের নামও জড়িয়েছে। অভিযোগ, ফলটনের ওই সরকারি হাসপাতালে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বদলে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হত ওই মহিলা চিকিৎসকের উপর। একইভাবে ধৃত দুষ্কৃতীদের মেডিকেল টেস্টের রিপোর্টও পাল্টে দেওয়ার জন্য পুলিশ ও রাজনৈতিক মহল থেকে চাপ দেওয়া হত বলে খবর। এক সাংসদের তরফেও সেই চাপ এসেছিল বলে খবর। ওই মহিলা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জেলা মেডিকেল কাউন্সিলের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল পুলিশ। তাঁর ব্যবহার নিয়েও অভিযোগ তোলা হয়েছিল। সেইসব অভিযোগের জবাবে মৃত্যুর কয়েক মাস আগে চার পাতার চিঠি লিখেছিলেন চিকিৎসক। সেই চিঠিতেই পুলিশের পাশাপাশি মেডিকেল রিপোর্ট পালটানোর জন্য এক সাংসদও চাপ দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন তিনি। তবে সেই সাংসদের নাম তিনি উল্লেখ করেননি। সেই সঙ্গেই জানিয়েছিলেন, শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই তিনি কয়েকজন অভিযুক্তকে ছাড়তে না চেয়ে ভরতি করেছিলেন। 

    একের পর এক বিষয় সামনে চলে আসায় এদিন মহারাষ্ট্রের বিরোধী দলগুলি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে সুর চড়িয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহাযুতি সরকারকে নিশানা বানিয়েছেন প্রবীণ এনসিপি নেতা ধনঞ্জয় মুন্ডে। তাঁর তোপ, প্রয়াত চিকিৎসক পুলিশের শীর্ষস্তরে বারবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও তাঁর কথায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এটা খুবই গুরুতর বিষয়। এই ঘটনায় সিট গঠন করে তদন্ত করা উচিত। বিচারের প্রক্রিয়া চালানো উচিত ফাস্ট-ট্র্যাক আদালতে। মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের মুখপাত্র শচীন সাওয়ান্তের অভিযোগ, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মহিলাদের নিরাপত্তারক্ষায় ব্যর্থ। শিবসেনা (ইউবিটি) নেত্রী সুস্মিতা আনধারের দাবি, সিট গঠন করে নিরপেক্ষ তদন্ত চালাতে হবে। এদিন তৃণমূল কংগ্রেসও বিজেপিকে তুলোধোনা করেছে। কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার তোপ, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর কোনও বিবৃতি আমরা পাইনি। মহিলা কমিশন কোথায়? নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে তারা দেখা করতে গিয়েছে? আর সবচেয়ে বিস্ময়কর— মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও ওঠেনি, যা বাংলায় এধরনের ঘটনা ঘটলে প্রায়ই দেখা যায়। অভয়ার জন্য যারা একসময় গলা ফাটিয়েছিলেন, তাঁরা এখন নীরব কেন? সবাই এত চুপ কেন?   
  • Link to this news (বর্তমান)