• তৃণমূলের অন্দরে গোয়েন্দাগিরির চেষ্টা, অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে, ভিতরের খবর জানতে ভুয়ো সংস্থার নামে ফোন, নদীয়ায় শোরগোল
    বর্তমান | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কে কেমন নেতা, কোথায় প্রার্থী দিলে ফল ভালো হবে, কোন অঞ্চলে সংগঠন কতটা মজবুত— মোবাইলে ফোন করে এমনই সব প্রশ্ন করা হচ্ছে নদীয়ার তৃণমূল নেতাদের। প্রথমে অনেকেই ভেবে বসেন, সম্ভবত রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কোনও সংস্থা তথ্য সংগ্রহ করছে। কিন্তু পরে সন্দেহ তির ঘোরে বিজেপির দিকে। তৃণমূলের অন্দরের খবর সংগ্রহ করতে গেরুয়া শিবিরের চাল নয় তো! তবে এই অভিযোগকে আমল দিতে নারাজ বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। 

    তৃণমূলের অভিযোগ, বিরোধী শিবিরের পক্ষ থেকেই পরিকল্পিতভাবে বেসরকারি সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের কর্মীরা ‘তৃণমূলের জরিপ সংস্থা’-র প্রতিনিধি সেজে নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। উদ্দেশ্য, শাসক দলের গোপন তথ্য বের করা, অন্দরের হালচাল বোঝা। 

    তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে জেলার নেতৃত্বের কাছে। নির্দেশ, অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোনে কোনওভাবেই দলের সাংগঠনিক বা রাজনৈতিক তথ্য ভাগ করা যাবে না। এমনকী জরিপ বা মূল্যায়নের নামেও নয়। কারণ ফোনের ওপারে কে আছে, সেই পরিচয় যাচাই করা এখন কঠিন। নদীয়ার সীমান্তবর্তী সংখ্যালঘু ও নমঃশূদ্র অধ্যুষিত এলাকার তথ্য সংগ্রহে জোর দিচ্ছে ওই সংস্থা। 

    রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, বিজেপির এই তথাকথিত ‘তথ্য সংগ্রহ অভিযান’ তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতারই ইঙ্গিত। যার জন্য তৃণমূলের অন্দরে গোয়েন্দাগিরি করাতে হচ্ছে বাইরের সংস্থাকে দিয়ে। 

    তবে তৃণমূলের নেতৃত্বের মতে, এই ঘটনা প্রমাণ করছে দল এখনও এতটাই মজবুত যে, বিরোধীদের গোপনে তথ্য সংগ্রহে নামতে হচ্ছে। অন্যদিকে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, নির্বাচনের আগে রাজ্যজুড়ে বেশি কিছু ইস্যুতে তৃণমূল বেআব্রু হয়েছে। যার জন্যই শাসকদল ভুয়ো প্রচার চালাচ্ছে। 

    কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের যুব সভাপতি অয়ন দত্ত বলেন, আমরা জানতে পেরেছি বিভিন্ন জেলায় ভুয়ো এজেন্সির নাম করে ফোন আসছে। তারপর তারা তথ্য সংগ্রহ করছে। সংখ্যালঘু ও নমঃশূদ্র এলাকাতেও এইভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা সচেতন। 

    সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনকে সামনে রেখেই রাজনৈতিক পারদ চড়ছে। সেই সঙ্গে শাসক-বিরোধী উভয় গোষ্ঠীই সংগঠন গুছিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি একে অপরের প্রতিটি পদক্ষেপের উপর নজর রাখছে। তৃণমূলের তরফ থেকেও বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের নামানো হয়েছে। যারা এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে রাজ্যে পাঠাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরাও তৃণমূলের নিচুতলার নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তৃণমূলের দাবি, এটাকেই ঢাল করছে বিজেপির হয়ে চরবৃত্তি করা সেই সংস্থা। এমনিতেই এসআইআর ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতি সরগরম। এই পরিস্থিতিতে অচেনা ফোন কলে নেতাদের বেফাঁস কথাবার্তা বিপাকে ফেলতে পারে দলকে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নজরে এসেছে শাসক দলের নেতৃত্বের। জেলার তৃণমূল নেতাদের এ নিয়ে সতর্কও করেছে রাজ্য নেতৃত্ব। 

    কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। এরকম কিছুই হচ্ছে না। বিজেপি মিথ্যা ও ছলনার আশ্রয় নেয় না। এটা তৃণমূলের সংস্কৃতি। আসলে নির্বাচনের আগে বেশ কিছু ইস্যুতে তৃণমূল বেআব্রু হয়েছে। যার জন্য এসব রটাচ্ছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)