হাঁড়িতে চাল জোটে না, রানাঘাটের ক্রিকেটার সমরেশ রাজ্য দিব্যাঙ্গ দলের সহ অধিনায়ক
বর্তমান | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: স্থায়ী চাকরি জোটেনি। কৃষি বিপণন দপ্তরের অস্থায়ী চাকরি সম্বল করেই স্বপ্ন দেখছেন রানাঘাটের বিশেষভাবে সক্ষম ক্রিকেটার সমরেশ। একসময়ে ভারতীয় দিব্যাঙ্গ দলের সদস্য ফের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ডাক পেলেন বাংলার দলে। শুধু দলে স্থান পাওয়াই নয়, তাঁকে সহ অধিনায়কের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।
রানাঘাট কোর্ট পাড়ার বাসিন্দা সমরেশ বিশ্বাস ডান হাতের আঙুলের অক্ষমতার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম। কিন্তু স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। খানিকটা যে সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দিব্যাঙ্গ ক্রিকেটে প্রথমে বাংলা দলের হয়ে সুযোগ, অতঃপর তাঁর অধ্যবসায়ের জোরে ভারতের জাতীয় দলের সদস্য। ক্রমে জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ অলরাউন্ডার হয়ে ওঠেন তিনি। বাংলা দলের হয়ে ২০১৪ সালের কর্নাটকের বিরুদ্ধে ১১৭ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস রয়েছে। আবার গত বছর হরিয়ানার বিরুদ্ধে মাত্র দুই ওভারে ১৭ রান দিয়ে ছয় উইকেট নেওয়ার নজিরও তাঁর দখলে। অভাবের সংসারে সদস্য বলতে মা, স্ত্রী এবং তিন বছরের এক মেয়ে। ক্রিকেট খেললেও দরকার ছিল নিশ্চিত একটি রোজগারের। রাজ্যের কৃষি বিপণন দপ্তরের রেগুলেটেড মার্কেটিং কমিটির নৈশপ্রহরীর পদে অস্থায়ী চাকরি জোটে। রাজ্য এবং দেশের হয়ে নজির গড়লেও সেই চাকরি পাকা করার উদ্যোগ নেয়নি সরকার। ফলে টিকে থাকার লড়াইটা ক্রমশ কঠিন হয়েছে। তবু হাল ছাড়েননি সমরেশ। মাটি কামড়ে পড়ে থেকে এবার ফের দিব্যাঙ্গ ক্রিকেটে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের বাংলা দলে সুযোগ পেয়েছেন।
কোর্ট পাড়ার দু’ কামরার বাড়িতে বসে সমরেশ বলছিলেন, এক সময়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশেও খেলেছি। ভারতের জার্সি গায়ে এক ডজন ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হয়েছে। ২৬ বছর ক্রিকেটে টিকে রয়েছি। খেলায় আরও মাইল ফলক তৈরি স্পর্শ করতে চাই। তবে প্রত্যাশা ছিল, সরকার অন্তত তোমার চাকরিটা স্থায়ী করে দেবে। সেটা হয়নি এখনও। আশা করি এরপরে যদি অন্তত সেইটুকু উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব।
সমরেশের চোখে এখন একরাশ স্বপ্ন। ১৬টি রাজ্যের প্রতিযোগিতায় বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করাই লক্ষ্য তাঁর। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত সাফল্য লাভের ইচ্ছে তো রয়েছেই। কিন্তু মাঠে কৃতিত্ব যাই হোক না কেন, হাড়িতে যদি চালই না জোটে তাহলে খালি পেটে কি স্বপ্ন দেখা যাবে? এই প্রশ্নই কুরে কুরে খায় সমরেশকে।