স্কুলে পরিকাঠামোয় সমস্যা নেই, ক্লাসে পড়ানোর মান উদ্বেগজনক, পরিদর্শন রিপোর্টে চিন্তিত রাজ্যের শিক্ষাদপ্তর
বর্তমান | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: ক্লাসরুম টিচিং বা শ্রেণিকক্ষে পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে ডাহা ফেল সিংহভাগ স্কুলই। রাজ্যজুড়ে স্কুলে স্কুলে বিশেষ পরিদর্শন চলার পর এমনই উদ্বেগজনক ছবি উঠে আসছে শিক্ষাদপ্তরের রিপোর্টে। স্কুলের অন্যান্য পরিকাঠামো নিয়ে অবশ্য বিরাট শঙ্কার কারণ মেলেনি। তবে, স্কুলের যে মূল উদ্দেশ্য, সেই পঠনপাঠন নিয়েই রয়েছে দুশ্চিন্তা। এই দায় প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকদের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদেরও নিতে হবে বলে মনে করছেন পরিদর্শকরা।
বিদ্যাসাগরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে চলতি বছরের মতো গত বছরও রাজ্যের স্কুলগুলিতে বিশেষ পরিদর্শন হয়েছিল। সেই রিপোর্ট সম্প্রতি জমা পড়েছে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের কাছে। ডিআই থেকে শুরু করে এডিআই, এআই, এসআই স্তর পর্যন্ত আধিকারিকরা এতে অংশ নিয়েছিলেন। ৫০টি পয়েন্টের উপর সমীক্ষা হয়েছিল। কিছু পয়েন্টে অসঙ্গতি এবং অসম্পূর্ণতা থাকায় সেগুলি বাদ দিয়েই জমা পড়েছে রিপোর্ট। তাতে দেখা গিয়েছে, পাঠদানের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট ক্লাসরুমে’র পরিকাঠামো তো দূর, ব্ল্যাকবোর্ডই ঠিকমতো ব্যবহার হয় না বহু স্কুলে। ‘টিএলএম’ বা ‘টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল’ অর্থাৎ ব্যবহারিক সামগ্রীর মাধ্যমে পাঠদানের অনীহাও উদ্বেগজনক। এই ‘টিএলএমে’র মধ্যে বইখাতার পাশাপাশি গ্লোব, নানারকম চার্ট, বিজ্ঞান বিষয়ের নানা প্র্যাকটিক্যাল উপকরণ প্রভৃতি পড়ে। এছাড়াও নানা ডিজিট্যাল টুলস তো রয়েছেই। সেসবের হাল বেশ খারাপ। ফলে, ‘লার্নিং আউটকাম’ তথৈবচ! নীচু ক্লাসের অঙ্ক কষা বা বই পড়ার ক্ষেত্রেও হোঁচট খেয়েছে পড়ুয়ারা।
পরিদর্শকরা অবশ্য এর মধ্যেও খানিক আশার আলো দেখতে পেয়েছেন। বেশ কিছু স্কুল ক্লাসরুম টিচিংয়ে নানা অভিনব এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতির সাহায্য নিচ্ছে। সেগুলি রীতিমতো মডেল হতে পারে। শিক্ষামূলক চিত্রে ক্লাসরুম সাজিয়ে তোলা, ‘স্মার্ট ক্লাসরুম’ ব্যবহার, ‘টিএলএমে’র সঠিক ব্যবহারের পাশাপাশি ‘পাপেট্রি’ অর্থাৎ, পুতুল নাচ বা নাটকের মতো মাধ্যমও ব্যবহার হচ্ছে পঠনপাঠনে। এছাড়া বেশ কিছু স্কুল একেবারে নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে গিয়েও ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারিক জ্ঞান দিচ্ছে কিছু বিদ্যালয়। সিলেবাসের পড়ার সঙ্গেও মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাস্তব অভিজ্ঞতা। তবে, এধরনের স্কুলগুলি সার্বিক অর্থেই ব্যতিক্রম। পরিদর্শন রিপোর্টটি নিয়ে রীতিমতো গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। বিকাশ ভবন থেকে এ নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করেননি।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মিড ডে মিল পরিকাঠামো এবং তা খাওয়ার হার এ রাজ্যে বেশ ভালো। শৌচাগার, পানীয় জলের পরিকাঠামো মোটামুটি সন্তোষজনক। এ রাজ্যে ‘গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও’ বা স্কুলশিক্ষায় নথিভুক্তি বরাবরই দেশের মধ্যে সেরা। সেটাও সমীক্ষায় উঠে এসেছে। তবে, স্কুলের অডিটের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে রিপোর্ট থেকে। কারণ, মাধ্যমিক স্কুলে অডিট হলেও প্রাথমিকে তা হয় না। ফলে জটিলতা এড়াতেই এটি বাদ দেওয়া হয়েছে সার্বিক রিপোর্ট থেকে।