• পুলিশের ছাড়পত্র ছাড়া হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ নয়: মুখ্যমন্ত্রী
    বর্তমান | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পুলিশের ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ছাড়া সরকারি হাসপাতালে কোনও বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী কাজ করতে পারবেন না। পুলিশি ছাড়পত্র ছাড়া কোনও প্রাইভেট সিকিওরিটি বা কোনও ঠিকাকর্মীকে নিয়োগ করাও হবে না। পাশাপাশি সচিত্র পরিচয়পত্র এবং ইউনিফর্ম ছাড়া কোনও ঠিকাকর্মীকেও আর হাসপাতালে ডিউটি করতে দেওয়া হবে না। সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলিতে নারী নিগ্রহের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য। শনিবার দুপুরে মেডিকেল কলেজ কর্তাদের সঙ্গে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম সহ পদস্থ প্রশাসনিক কর্তাদের বৈঠক ছিল। ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সহ জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। পরে সেখানে ফোন মারফত যোগদান করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৈঠকেই মমতার নির্দেশে এই বার্তা জানিয়ে দেন মুখ্যসচিব। মমতা বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ গণ্ডগোল হচ্ছে স্বাস্থ্য নয়তো পুলিশে। দুটোই আমার দপ্তর। রাজ্যের বদনাম করার জন্য বাইরে থেকে লোক ঢুকিয়ে কেউ এইসব চক্রান্ত করছে কি না, দেখতে হবে।’ বৈঠকে প্রশাসনিক কর্তারা উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘দুষ্কর্মের অভিযোগে কোনও ঠিকাকর্মীকে সরিয়ে দিলেও দেখা যাচ্ছে, কিছুদিন পর সে অন্য নিরাপত্তা এজেন্সির মাধ্যমে হাসপাতালে নিযুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এমন কেন হবে?’  

    স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, বর্তমানে রাজ্যজুড়ে প্রায় ১৬ হাজার সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। সবমিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ঠিকাকর্মী কাজ করেন। সিকিওরিটি, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী-ওয়ার্ডবয়, ডায়েট, হাসপাতালের পূর্ত বিভাগ, ইমার্জেন্সিতে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সহ অসংখ্য কাজ তাঁরা করেন। কিন্তু কারও কোনও পুলিশ ভেরিফিকেশনই নেই। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রাইভেট সিকিওরিটি। আরও ৩০ শতাংশ সাফাইকর্মী-ওয়ার্ডবয়। এই পুরো প্রাইভেট ওয়ার্কফোর্সের তথ্য নিয়ে ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরির পরামর্শ দেন ডিজি রাজীব কুমার। বলেন, ‘এদের বিস্তারিত ডেটা আমাদের কাছে থাকলে, নিমেষে অতীত ইতিহাস বের করে দেওয়া যাবে।’ 

    এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ বৈঠক শুরু হয়। কলকাতার পাঁচ হাসপাতালের অধ্যক্ষরা ছিলেন নবান্নে। জেলার কর্তারা ভার্চুয়াল মোডে বৈঠকে যোগ দেন। শুরুতে বলা হয়, যেভাবে ঘটনাগুলি ঘটছে, বোঝাই যাচ্ছে, যারাই করছে, হাসপাতালের আঁটঘাট সব জানে। এরপরই সিদ্ধান্ত হয়, ঠিকাকর্মীদের ডিউটি রোস্টার সিকিওরিটি ইনচার্জের কাছে রোজ জমা রাখতে হবে। পূর্তদপ্তরের নির্মাণ কাজে যুক্ত বাইরে লোকজন সম্পর্কে সমস্ত তথ্য হাতে রাখতে হবে। অভয়া কাণ্ডের পর রাত্রিসাথী প্রকল্পে প্রচুর সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। সেগুলির মাধ্যমে সঠিকভাবে নজরদারি হচ্ছে কি না, সেদিকে জোর দিতে হবে। পিজি’র অধিকর্তা ডাঃ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ট্রমা সেন্টারের সামনে সবসময় রোগীর বাড়ির লোকজনের জমাট ভিড়। তাঁদের সরানোও কঠিন।’

    এদিনের বৈঠকের পর জেলায় জেলায় বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আলো, গেটের অবস্থা সহ নিরাপত্তা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক শুরু হয়ে যায়। স্বাস্থ্যে ঠিকাকর্মীদের সংগঠন সারা বাংলা হাসপাতাল রোগী কল্যাণ ও অস্থায়ী ঠিকাকর্মী ঐক্য বৃন্দের কার্যনিবাহী সভাপতি ইন্দ্রজিৎ মোহন্ত বলেন, ‘ঠিকই, আমাদের কোনও পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়নি। জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে যাচাইয়ের কাজ যাতে হয়রানি ছাড়া সম্পন্ন হয়, সেজন্য প্রশাসনের সাহায্য চাই।’
  • Link to this news (বর্তমান)